সন্তোষ ও শান্তি
গৌতম বুদ্ধ বনের মধ্যে দিয়ে এক শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে এক ঠাণ্ডা জলস্রোত দেখে, সেখানে হাত পা ধুয়ে, এক গাছের নিচে ধ্যানে বসলেন।
শহরের রাজা ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। নিজের রাজত্ব বাড়াবার জন্যে তিনি সর্বদাই অন্য রাজরাজড়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতেন বলে, তার অন্তঃকরণ ঘৃণা, বিদ্বেষ ও ভয়ে পরিপূর্ণ ছিল। গাছের তলায় চোখ বুজে এক সন্ন্যাসী অলসভাবে বসে আছেন দেখে, ঘোড়ার উপর থেকে রাজা নামলেন ও বুদ্ধদেবকে চিৎকার করে ও ক্রুদ্ধভাবে বলতে লাগলেন, “ওহে সন্ন্যাসী, চোখ খুলে দেখ তোমার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে। আমার মতন একজন রাজা পর্যন্ত অলস ভাবে বসে থাকে না। তোমরা সন্ন্যাসীরা অন্যের ঘাড়ে বসে খাও আর অন্যদেরও অলসতার কথা শেখাতে চাও।” এই ভাবে কথা বলতে বলতে রাগের মাথায় যত রকমের গালমন্দ গৌতমকে দিতে দিতে নিজেই ক্লান্ত হয়ে থামলেন।
গৌতম সব কথা শান্ত ভাবে শুনলেন; এখন আস্তে আস্তে চোখ খুলে একটু হেসে রাজাকে বললেন, “ব সো বৎস। তুমি নিশ্চয়ই ক্লান্ত ও পিপাসার্ত। ঐ ঝর্ণা থেকে তোমাকে একটু ঠাণ্ডা জল এনে দেবো?”
এই সস্নেহ, কোমল, মিষ্টি-মধুর কথা শুনে রাজা একেবারে অভিভূত হয়ে গেলেন। তাঁর তক্ষুণি মনে হলো এই সন্ন্যাসী নিশ্চয়ই মহান রাজকুমার সিদ্ধার্থ—যিনি শান্তির অন্বেষণে রাজপ্রাসাদের সুখ-সম্পদ ছেড়ে এসে বুদ্ধ হ য়েছেন। তিনি তখনসন্ন্যাসীর পায়ের উপর পড়লেন ও তাকে বললেন, “আমার এই গুরুতর অন্যায় ক্ষমা করুন। আমায় বলুন, আমি এত ক্রোধ ও তিরস্কার করা সত্ত্বেও আপনি কি করে এমন ধীরস্থির হয়ে রইলেন, এমনকি আমার উপর প্রীত রইলেন?
বুদ্ধ বললেন, “বৎস, মনে কর তুমি কাউকে এক থালা মিষ্টি দিলে কিন্তু সে সেটা নিলো না। সেটা তাহলে কোথায় যাচ্ছে?” রাজা তৎপর হয়ে জবাব দিলেন, “নিশ্চয়ই যে দিয়েছে, তার কাছেই ফিরে যাচ্ছে। তা যদি হয়, তাহলে তুমি দেখলে তো, তোমার অতসব কথার একটাও আমি ধরিনি। তাহলে ঐসব কথায় আমি কি করে আঘাত পাচ্ছি?”
রাজা তখন নিশ্চিত বুঝতে পারলেন যে, এই সন্ন্যাসী স্বয়ং বুদ্ধ ছাড়া আর কেউ নয়। তিনি প্রণত হয়ে, আবার বললেন, “হে বুদ্ধ, আমাকে অনুগ্রহ করে প্রকৃত সুখের পথ দেখিয়ে দিন।” বুদ্ধের চোখ দিব্যজ্ঞানের জ্যোতিতে দীপ্ত হয়ে উঠলো। তিনি বললেন, “বৎস ক্রোধ, লোভ, ঈর্ষা, ভয় ইত্যাদি উত্তেজনা মানুষের সমস্ত সুখ কেড়ে নেয়। জীবনের প্রকৃত সুখের মূল ভিত্তি হলো সন্তোষ, শান্তি ও প্রেম। যার সন্তোষ আর শান্তি নেই সে হলো ভিক্ষুক। যে, ভালবাসা দিয়ে অন্যের সেবা বা সাহায্য করে না সে হলে অলস। যে সদা-সর্বদা সবার জন্য সন্তোষ, শান্তি ও প্রেমের মুকুট পরে থাকে সে হলো রাজার রাজা, কারণ শুধু সে-ই জীবনে প্রকৃত সুখ খুঁজে পেয়েছে।”
রাজা কৃতজ্ঞ চিত্তে বুদ্ধকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বললেন, “হে বুদ্ধ, আমাকে আপনার শিষ্য করে নিন। আজ থেকে আপনি আমার প্রভু, আমাকে আপনি যেভাবে পরিচালিত করবেন আমি সেইভাবেই চলবো।”
প্রশ্নঃ
- রাজা গৌতম বুদ্ধের উপর ক্রুদ্ধ হলেন কেন? বুদ্ধকে গালাগাল দিয়ে তিনি ঠিক করেছিলেন না অন্যায় করেছিলেন?
- রাজা বুদ্ধকে সমানে কটু কথা বলে যাওয়া সত্ত্বেও বুদ্ধ কি করে শান্ত হয়ে রইলেন?
- রাজাকে বুদ্ধ কি উপদেশ দিলেন?