মহাপুরুষদের উপদেশ
প্রত্যেক দেশের সাধুসন্ত সমাদৃত, কারণ পরম সত্যকে তারা খুব সহজ উপায়ে আমাদের শিক্ষা দেন। তারা আমাদের প্রকৃত সুখের পথ বলে দেন। দক্ষিণ ভারতের মহাজ্ঞানীদের একজন হলেন রমণ মহর্ষি। ভারতের সমস্ত জায়গা থেকে, এমনকি অন্য অনেক দেশ থেকেও ভক্তরা তাঁকে দর্শন করে তাঁর আশীর্বাদ নেবার জন্য আসতো।
একদিন এক ভক্ত দেখেন যে মহর্ষি পলাশের পাতা একসঙ্গে করে সরু কাঠি দিয়ে গেঁথে, আশ্রমবাসীদের জন্যে খাবার-পাতা তৈরী করছেন। এক তরুণ ভক্ত কাছেই দাড়িয়েছিলো। সে বললো, “ভগবান, আপনি গাছের পাতা গাঁথছেন। এটা কি একটা অনাবশ্যক কাজ হচ্ছে না, আর, আপনারও তো সময় নষ্ট হচ্ছে? মহর্ষি হেসে বললেন, “বৎস, কোন কাজেই সময়ের অপব্যয় হয় না যদি তা সৎ উদ্দেশ্যে, ন্যায় পথ ধরে করা যায়। ছোটখাটো সমস্ত কাজ থেকেই, যা কিছু কাজ তোমরা করে থাকো সব কিছু থেকেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা পর্যন্ত তোমরা নিতে পারে। এই পাতা গাঁথা ব্যাপারটাই ধর না। ক্ষুধার্ত মানুষকে খেতে দেবার সময়ে এই সব গাঁথাপাতাকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে হবে। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে ঐ সব পাতার যোগ্যমূল্য হলো নিক্ষিপ্ত হওয়া।। সেইরকম, আমাদের দেহ ও শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় হবে তখনই, যখন একে আমরা সৎ জীবন যাপন করার ও দীনদরিদ্রকে সেবা করার কাজে লাগাতে পারবো। স্বার্থপর মানুষ শুধু নিজেকে নিয়েই আছে, একশ বছর বেঁচে থাকলেও সে তার জীবনকে নষ্ট করে ফেলছে। সে ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি জন্ত জানোয়ারের চাইতে কোন অংশে শ্রেষ্ঠ নয়, এরাও বেঁচে থাকে, খায়দায়, বড় হয়।
আর একদিন, রমণ মহর্ষি রান্নাঘরের কাছে মাটিতে কয়েক দানা চাল পড়ে আছে দেখতে পেয়ে তখুনি সেখানে বসে পড়লেন একটা একটা করে চাল খুঁটে তুলতে লাগলেন। কিছু ভক্ত মহর্ষি কি করছেন দেখার জন্যে তাকে ঘিরে দাঁড়ালো। তারা বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে, যে মহাপুরুষ ঈশ্বরের জন্য বাড়ীঘর সমস্ত ছেড়ে এসেছেন, তিনি কয়েক দানা চালের জন্য এত যত্ন করছেন। তাদের মধ্যে একজন বলেও ফেললো, “ভগবান, রান্নাঘরে আমাদের অনেক বস্তা চাল আছে। আপনি এই কটা চাল তোলার জন্য জন্যে এত কষ্ট করছেন কেন?”
মহর্ষি চোখ তুলে বললেন তোমরা শুধু কয়েকটা দানা চালই দেখছো। কিন্তু দানাগুলোর মধ্যে কি আছে দেখার চেষ্টা করো। যেসব চাষী খেতে লাঙ্গল দিয়েছে বীজ রোপন করেছে, তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম, সাগরের জল, সূর্যের তাপ, মেঘ-বৃষ্টি, ঠান্ডা হাওয়া, উষ্ণ সূর্যালোক, নরম মাটি, ধান গাছের প্রাণ সমস্তই এই দানাকটার ভেতরে আছে। এটি যদি তোমরা সম্পূর্ণ বুঝতে পারো তাহলে প্রত্যেক দানার ভেতরে ঈশ্বরের হাত দেখতে পাবে কাজেই তোমাদের পায়ের তলায় এদের পিষোনা। এদের যদি তোমরা খেতে না চাও পাখিদের দিয়ে দাও। এই ভাবেই সাধু-সন্তরা আমাদের সুখী ও প্রয়োজনীয় জীবন কিভাবে কাটাতে হয় তারপর দেখিয়ে দিয়েছেন। যারা সাধুসঙ্গ যখন-তখন লাভ করে তারা প্রকৃতই ভাগ্যবান।
প্রশ্ন :
- একজন মহাপুরুষের সঙ্গে অন্য মানুষদের তফাৎ কোথায় মহাপুরুষ সকলের শ্রদ্ধার পাত্র হন কেন?
- কোন মহাপুরুষ, যাকে তুমি দেখেছো বা যার কথা পড়েছ কিংবা শুনেছো তার সম্বন্ধে লেখ। তার থেকে তুমি কি কিছু শিখেছ?
- মহর্ষি রমণের মতে জীবন কখন প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে আর কখনই বা এ সময় নাশকহয়? ৫।কিভাবে আমরা প্রতিটি শস্য কণার ভেতরে ঈশ্বরের হাত দেখতে পাবো?