দম্ভের শিক্ষা
এক সময়ে গান্ধীজী ইংল্যান্ডে এক সম্মেলনে যোগ দেবার জন্য বড় এক ব্রিটিশ জাহাজে করে চলেছেন। জাহাজের ডেকের উপর এক ডেস্কের ধারে বসে, তিনি চিঠি লিখছিলেন।একজন সুসজ্জিত ইংরেজ যুবক গান্ধীজীকে জাহাজের অন্য সব যাত্রীদের থেকে স্বতন্ত্র ধরণের দেখে কৌতুক বোধ করতে লাগলো।
দাম্ভিক ইরেজ যুবক তার ঘরে গিয়ে কয়েক টুকরো কাগজ নিয়ে, গান্ধীজীকে উত্যক্ত করার জন্য জযন্য কথাবার্তা লিখলো ও হাস্যকর কিছু ছবি আঁকলো। একজন অর্দ্ধ-উলঙ্গ, টাক মাথা, দাঁত পড়া লোক কেন ইংল্যান্ড যাচ্ছে ভেবে তার অবাক লাগছে। সে গান্ধীজীকে বিদেশে যাবার “পাগলামি” ছেড়ে দেবার জন্যে উপদেশ দিয়েছে।
সমস্ত কাগজের টুকরো পরিপাটি করে পিন দিয়ে গেঁথে, ডেকের ধারে সে ফিরে এলো। গান্ধীজী যেখানে বসে লিখছেন, সেই ডেস্কের ধারে সে গট্মট্ করে হেঁটে এলো। গান্ধীজী চোখ তুললে, ইংরেজ যুবক ভারতীয়দের প্রতি তার অসৌজন্যর ভাব ফুটিয়ে তোলা, পিন করা কাগজ গুলো তাঁর হাতে দিলো। সে বললো, “এটা দেখতে পাবে চিত্তগ্রাহী আর দরকারী। পড়ে নিয়ে তোমার সঙ্গে রেখে দাও।”
এতে গান্ধীজীর কি প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখার জন্যে সে কিছুটা দূরে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো। গান্ধীজী ধীর স্থির ভাবে, তাঁকে যা লেখা হয়েছে তার প্রত্যেকটি অক্ষর পড়লেন, মাথা তুলে মুহূর্তের জন্য ইংরেজ যুবকের দিকে তাকালেন। তারপর তিনি আস্তে আস্তে পিনটা খুলে নিলেন আর কাগজের টুকরোগুলো ডেস্কের তলায় ময়লা ফেলার টুকরিতে ফেলে দিলেন। ঐ যুবকের দিকে তাকিয়ে তার স্বাভাবিক হাসি হেসে বললেন, “তুমি আমায় যা করতে বলেছে আমি তাই করেছি। একমাত্র চিত্রগ্রাহী আর দরকারী যে পিনটা আমাকে দিয়েছে, আমি সেটা আমার কাছে রেখে দিয়েছি।”
ইংরেজ যুবক তক্ষুনি তার ভুল বুঝতে পারলো। সে ভেবেছিলো যে, সে যা লিখেছে তা দেখে গান্ধীজী রাগে ফেটে পড়ে এমন এক দৃশ্যের অবতারণা করবেন যে, জাহাজের সমস্ত সাদা চামড়ার যাত্রীরা তা উপভোগ করবে। কিন্তু, গান্ধীজীর সংক্ষিপ্ত সুমিষ্ট উত্তর তার হৃদয় স্পর্শ করলো। গান্ধীজী কতখানি বুদ্ধিমান, মার্জিত ও নম্র তা সে বুঝতে পারলো। লজ্জায় তার মাথা নীচু হয়ে গেল, সে যে পথ দিয়ে এসেছিল সেই পথেই ফিরে গেল। গান্ধীজীর কাছ থেকে সে যে শিক্ষা পেল, তা তার দম্ভ আর প্রাধান্য ভাবকে নিবৃত্ত করার দিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্নঃ
- ইংরেজ যুবকের কি ভুল হয়েছে?
- গান্ধী তাকে কি শিক্ষা দিয়েছিলেন?
- মনে কর, এক দান্তিক ছাত্র ক্লাসে তোমাকে বোকা গাধা বলল,তুমি তখন কি করবে?