জ্ঞানী ধর্মরাজ
পাণ্ডব ভাইদের জ্যেষ্ঠ ভাই ছিলেন যুধিষ্ঠির। তাঁকে ধর্মরাজ বা ধর্মের মূর্তবিগ্রহ বলা হত। মহাভারতের অসংখ্য ঘটনা থেকে এই বক্তব্য প্রমাণিত হয়।
পাণ্ডবদের বনবাসের সময় তারা দ্বৈতবনে এলেন। একদিন পাঁচ ভাই খুবই তৃষ্ণায় কাতর হলেন। যুধিষ্ঠির নকুলকে বললেন গাছের উপর উঠে কোথাও জল দেখা যাচ্ছে কিনা দেখতে। একটু দূরে একটি হ্রদ দেখতে পেয়ে ভাইদের অপেক্ষা করতে বলে নিজে জল আনতে গেল। হ্রদের কাছে গিয়ে নিজে একটু জল খেয়ে কলসী ভর্তি করবে ভাবল। সে জল পান করতে যাবে এমন সময় কোথা হতে যেন কেউ বলে উঠল, “এ জলে হাত দিও না, আমি এ হ্রদের মালিক। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জল পান করলে বাঁচবে না।” নকুল তার কথায় আমল না দিয়ে জলপান করবার সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হল। এদিকে নকুলের আসতে দেরী হচ্ছে দেখে যুধিষ্ঠির সহদেবকে পাঠালেন। সহদেবও অদৃশ্য বাণীর কথা মত প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জল পান করে মৃত্যুমুখে পতিত হল। এইভাবে একে একে ভীম ও অর্জুন এসে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জল পান করে প্রাণত্যাগ করল। সবশেষে যুধিষ্ঠির এসে ভাইদের অবস্থা দেখে শোকে কাতর হলেন। যুধিষ্ঠির জলে নামতে যাবেন এমন সময় শুনতে পেলেন আমি বক, তোমার ভাইদের বধ করেছি, আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে জলে নামলে তোমার একই দশা হবে। যুধিষ্ঠির বললেন, “আমার এই বীর ভাইদের মেরে ফেলাটা কোনও পাখীর সাধ্য নয়। আপনি নিশ্চয়ই কোনও দেবতা। দয়া করে আপনার প্রশ্ন বলুন।” সেই সময় বিশালাকায় এক যক্ষ সামনে এসে প্রশ্ন রাখতে লাগলেন, আর যুধিষ্ঠির উত্তর দিয়ে চললেন। প্রশ্ন ও উত্তরগুলোর ভিতর কয়েকটি দেওয়া হলঃ
- প্রশ্ন– বিপদে মানুষকে কি রক্ষা করে?
উত্তর– সাহস - প্রশ্ন– কোন বিজ্ঞান অধ্যয়ণ করে মানুষ জ্ঞানী হতে পারে?
উত্তর– বিজ্ঞান ও শাস্ত্র পাঠ করে মানুষ জ্ঞানী হয় না। জ্ঞানী লোকেদের সঙ্গ করে জ্ঞানী হওয়া সম্ভব। - প্রশ্ন– পৃথিবীর চেয়েও মহান ও বড় প্রতিপালক কে?
উত্তর– মাতা - প্রশ্ন– বাতাসের চেয়েও সূক্ষ্ম ও দ্রুতগতি কি?
উত্তর– মন - প্রশ্ন– পথিকের সবচেয়ে বড় বন্ধু কে?
উত্তর– তার জ্ঞান - প্রশ্ন– সুখ কি?
উত্তর– সুখ হল সৎ আচরণের ফল - প্রশ্ন– কখন একজনকে সবাই ভালবাসে?
উত্তর– যখন সে গর্বকে ত্যাগ করে - প্রশ্ন– কি হারালে কোনও দুঃখের কারণ হয় না, বরং আনন্দ এনে দেয়?
উত্তর– ক্রোধ হারালে - প্রশ্ন– কি ছাড়লে মানুষ ধনী হতে পারে?
উত্তর– বাসনা - প্রশ্ন– এ জগতে সবচেয়ে আশ্চর্যের কি?
উত্তর– প্রত্যেকদিন লোকে আত্মীয়-স্বজনকে মরতে দেখে কিন্তু তবুও সে নিজে বেঁচে থাকতে চায়। যে নিজে মরবে সে মৃত ব্যক্তির জন্যে শোক করে। এই হল জগতের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়।
যক্ষ খুব খুশী হয়ে যুধিষ্ঠিরকে একটি বর দিতে চাইলেন। ভাইদের ভিতর যেকোনও একজনের প্রাণ ভিক্ষা চাইতে তিনি যুধিষ্ঠিরকে বললেন। যুধিষ্ঠির নকুলকে বাঁচিয়ে দেবার জন্যে মিনতি জানালে যক্ষ বীর যোদ্ধা অর্জুন বা মহাবল ভীমের প্রাণ ভিক্ষা না চেয়ে নকুলকে কেন ফিরে চাইছেন তা জানতে চাইলেন। উত্তরে যুধিষ্ঠির বললেন যে, তার দুই মাতা। মাতা কুন্তীর পুত্রদের ভিতর তিনি নিজে বেঁচে আছেন। তাই মাতা মাদ্রীর দুই পুত্রের ভিতর নকুলকে ফিরে পেতে চাইছেন। যুধিষ্ঠিরের এই ন্যায় পরায়ণতা দেখে তিনি তার চার ভাইকেই বাঁচিয়ে তুললেন।
প্রশ্নঃ
- চারজন পান্ডব কেন পুকুরের ধারে পড়ে মারা গেল?
- ধর্মরাজ কিভাবে তাঁর জ্ঞানের প্রদর্শন করলেন?
- যুধিষ্ঠির কেন নকুলের প্রাণ ফেরত পেতে চাইলেন?