মাতৃরূপী দ্রৌপদী
পান্ডবেরা দৃষ্টান্তমূলক নৈতিক জীবন যাপন করতেন। তাঁরা সনাতন ধর্মের সকল ন্যায়নীতি এবং অনুশাসন মেনে চলতেন। তাঁরা ছিলেন সদাচার,শৌর্য এবং পবিত্রতার মূর্ত প্রতীক। তাঁরা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ অনুসরণ করতেন। ধৈর্য, সহ্য, শান্তি প্রভৃতি গুণ তাঁদের চরিত্রে প্রকাশ পেত।পান্ডবদের পত্নী দ্রৌপদীও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষে গুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামা রাত্রের অন্ধকারে পাণ্ডব শিবিরে চোরের মত ঢুকে দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রকে ঘুমের ভিতর হত্যা করে। দ্রৌপদী পুত্র শোকে মুহ্যমান হয়ে গেলেন। পঞ্চপাণ্ডব শোকে কাতর হয়ে অশ্বত্থামাকে ধরে এনে দ্রৌপদীর সামনে রেখে বললেন, “ঘৃণ্য হত্যাকীরকে ধরে এনেছি। আপনি এখন যে শাস্তি দেবেন একে আমরা তাই দেব। এরও গলা কেটে দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। আপনি বললেই গলা কেটে দেব।”
শোকে মুহ্যমান দ্রৌপদী অশ্বত্থামাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এই সব শিশু উপপাণ্ডব আপনার কি ক্ষতি করেছিল? আপনার পিতা পাণ্ডবদের গুরু ছিলেন। সেই অর্থে আপনিও উপপান্ডবদের গুরু। আপনার তো কোনও ক্ষতি এরা করে নি। তাহলে ঘুমের ভিতর এদের হত্যা করলেন কেন?
ভীম আর অর্জুন এতকথা বলার কি প্রয়োজন বুঝতে পারছিলেন না। সঙ্গে সঙ্গে অশ্বত্থামাকে হত্যা করতে চাইলেন।
দ্রৌপদী ধীরে ধীরে ভীমকে বললেন, “আপনারা একে হত্যা করবেন না। অশ্বত্থামার মাতা এমনিতে স্বামী শোকে পাগল। তাকে আর পুত্র শোক দেবেন না। পুত্র শোকের জ্বালা আমি টের পাচ্ছি। অন্য কোনও মাকে পুত্র শোকে জর্জরিত হতে দেওয়া উচিৎ নয়। তাই অশ্বত্থামাকে ছেড়ে দিন।”
দ্রৌপদী ছিলেন এমনি মহিয়সী। দ্রৌপদীর ভিতরে যে মাতৃভাব ছিল তা অশ্বত্থামাকে ক্ষমা করে দিল।