মহীয়সী গান্ধারী
ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী ছিলেন গান্ধারী। যেহেতু ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ ছিলেন তাই বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে গান্ধারীও তার চোখ বেঁধে দিয়েছিলেন, জীবনে আর সেই চোখ খোলেন নি। তার এই পতিভক্তি জগতে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় প্রতিদিন দুর্যোধন মাতা গান্ধারীকে প্রণাম করে যুদ্ধ করতে যেতেন। একবারের জন্যেও গান্ধারী বলেন নি “তোমার জয় হোক”, তিনি বলতেন, “যে দিকে ধর্ম আছে, তাদের জয় হোক।” তিনি জানতেন নিজের ছেলেরা অধর্মের পথে চলছে। তার এই কথায় পাণ্ডবরা জয়ী হবে জেনেও তিনি এই আশীর্বাদ করতেন কারণ তিনি ধর্ম পথে অবিচল ছিলেন।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ হল। পাণ্ডবরা জয়ী হলেও তাদের বংশে আর কেউ বেঁচে ছিলেন না। পাণ্ডবদের সব কয়টি পুত্রেরই মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য পেলেও তাদের মনে শান্তি নেই। গান্ধারী পরাজিতপক্ষের মাতা আবার বিজয়ীপক্ষেরও বয়োজ্যেষ্ঠা। তিনি নিজের শোক সংবরণ করে ধৃতরাষ্ট্রকে প্রবোধ দিচ্ছেন আবার পুত্র শোকে কাতরা দ্রৌপদীকেও সান্তনা দিচ্ছেন। ধর্মপথে চলার জন্যে গান্ধারী প্রবল শক্তির অধিকারী ছিলেন। তাই কৃষ্ণ যখন যুধিষ্ঠিরকে তার কাছে নিয়ে এলেন গান্ধারী তখন নিজের মনকে শান্ত করতে চাইলেন, কারণ তার মনে প্রতিহিংসা এসে গেলে যুধিষ্ঠির বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাই তিনি মাথা নীচু করে রইলেন। কিন্তু বাঁধা চোখের কাপড়ের ফাঁক দিয়ে তাঁর দৃষ্টি যুধিষ্ঠিরের পায়ের আঙ্গুলে পড়ে কালো হয়ে গেল। এত গভীর ও প্রখর দৃষ্টি শক্তি তাঁর ছিল।
কৃষ্ণকে গান্ধারী বললেন,”তাকিয়ে দেখ, রাজ্যের সব নারী হয় স্বামী হারা, না হয় পুত্র হারা। কেন তুমি চোখ বুজে ছিলে? তুমি ত’ চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করে এই অবস্থা হতে উদ্ধার করতে পারতে।”
কৃষ্ণ সান্তনা দিয়ে আদর করে বললেন, “গান্ধারী আমায় বৃথা দোষ দিচ্ছ। আদর দিয়ে, শাসন না করে ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনদের নষ্ট করে দিয়েছিল। তুমি চোখ বেঁধে রেখেছ। মায়ের স্নেহ দৃষ্টি দুর্যোধনরা পায় নি। যে ছেলে মায়ের স্নেহ দৃষ্টি পায় তার কোনও দিন ক্ষতি হতে পারে না। সেই ছেলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে বাধ্য।”