বেশভূষা
তোমরা ইংরাজীতে একটা প্রবাদ আছে নিশ্চয়ই শুনেছ ‘Plain living and high thinking’। আমাদের ভারতীয় চিন্তাধারাও কিন্তু তাই। অনাড়ম্বর জীবন এবং উচ্চ চিন্তাধারার মধ্যে থাকাই হচ্ছে ভারতীয় আদর্শ। তোমরা দেখেছ জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী একটি ছোট ধুতি পরে থাকতেন। এই ছোট ধুতি পরেই তিনি বড়লাট এমন কি ইংল্যাণ্ডের প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গেও এই বেশভূষায় কথা বলেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকেও তোমরা জানো। তিনি খুব সাধারণ, অনাড়ম্বর বেশভূষা করতেন। তাঁর সেই ধুতি, জামা এবং তালতলার চটি খুবই বিখ্যাত।
একবার তাঁকে এক বিরাট সরকারী কর্মচারী ডিনার পার্টিতে নেমন্তন্ন করেছে। ঈশ্বরচন্দ্র এই ডিনার পার্টিতে গিয়ে পৌঁছলেন। দারোয়ান এই সাধারণ বেশভূষা পড়া দেখে তাঁকে চিনলও না, ফেরত দিয়ে দিলো। বলল, “এই বেশভূষা পরে ভেতরে ঢোকা যাবে না।”
ঈশ্বরচন্দ্র একটু চিন্তা করলেন। তারপর বাড়ী ফিরে গেলেন। বাড়ী ফিরে একটি স্যুট পরলেন। এবার যখন এলেন দারোয়ান আর বাধা দিল না। ভিতরে গিয়ে সকলের সাথে ডিনার টেবিলে বসলেন।
সকলেই তাঁকে দেখতে লাগলেন কেননা আজকের এই পার্টি তার জন্যই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খাওয়া শুরু হল। তিনি চামচে করে খাবারগুলো নিতে লাগলেন কিন্তু একটুও খেলেন না, সব কোটের পকেটে রাখতে লাগলেন। যিনি তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন, তিনি বললেন, “স্যার আপনি নিজে না খেয়ে সব খাবার এরকম কোটের পকেটে রেখে দিচ্ছেন কেন?”
বিদ্যাসাগর উত্তর দিলেন, “আপনি তো আমায় নেমন্তন্ন করেন নি, আমার পোশাককে নেমন্তন্ন করেছেন, কেননা, আমি যখন আমার পোশাকে এলাম, তখন দারোয়ান আমায় ঢুকতেই দিল না। কিন্তু যখন স্যুট পরে এলাম আমায় দারোয়ান বারণও করল না। তাতেই বুঝলাম আপনি আমায় নেমন্তন্ন করেন নি, আমার স্যুটকে নেমন্তন্ন করেছেন। তাই আমি পোশাককেই এই খাবারগুলো খাওয়াচ্ছি। এ খাবার আমার প্রাপ্য নয়।”
তখন এই নিমন্ত্রণকারী তার কাছে ক্ষমা চাইলেন। বললেন, “আপনি আমায় আজ যে শিক্ষা দিলেন এর জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।”
প্রশ্নঃ
- দারোয়ান বিদ্যাসাগরকে কেন ঢুকতে দিল না?
- তিনি তখন কি করলেন?
- অতিথিরা কেন আশ্চর্য হয়ে গেলেন?
- বিদ্যাসাগর কি উত্তর দিলেন?