প্রকৃত রাজা কে?
তোমরা দিগ্বিজয়ী আলেকজাণ্ডারের নাম শুনেছ। আলেকজাণ্ডার বহু দেশ জয় করেছিলেন। একবার তিনি এরকম দিগ্বিজয় অভিযানে বেরিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় এসে পৌঁছলেন। ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলে এক অসভ্য ধরনের উপজাতি সর্দারের সঙ্গে দেখা হল। তিনি আলেকজাণ্ডারকে বললেন, “মহারাজ, আপনি বিশ্রাম করতে চান তো ঐ পাহাড়ের ওপর একটি গুহা আছে, বেশ গাছপালা দিয়ে ঘেরা, ছায়াও পাবেন আর কাছাকাছি জলও পাবেন, ঐখানে গিয়ে বিশ্রাম করুন। আমরা আপনাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করছি।”
আলেকজাণ্ডারের এই লোকটির কথা শুনে ভারী ভাল লাগল। তিনি ঐ সর্দারের দেখানো জায়গাতে গেলেন। বিশ্রাম করলেন, স্নান করলেন। তখন এই সর্দার আলেকজাণ্ডারকে খেতে দিলেন। খাবারগুলি কিন্তু সোনার। তাকে সোনার আপেল, সোনার তরকারী—এসব খেতে দিয়েছেন। আলেকজাণ্ডার অবাক হয়ে গিয়ে বললেন, “তোমরা কি সোনা খাও, যার জন্য আমাকেও সোনা খেতে দিয়েছ? সর্দার বললেন, “না, না, না, আমরা তো এই বনের টাটকা ফলমূল পেড়ে খাই। কিন্তু তুমি তো দিগ্বিজয়ী রাজা। চারিদিকে সোনা, টাকা পয়সার সন্ধান করে বেড়াও, তাই আমি ভাবলাম তুমি বোধ হয় সোনাই খাও।”
আলেকজাণ্ডার চমকে গেলেন। তিনি একটু অস্বস্তি বোধ করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, এই অসভ্য, বুনো সর্দার যা বলছে তারমধ্যে যেন একটু সত্য লুকিয়ে আছে। লজ্জাও পেলেন। আলেকজাণ্ডার বললেন, “না, না, আমি তোমাদের কাছে কিছু জয় করতে আসিনি। আমি তোমাদের কাছে কিছু শিখতে এসেছি।”
একথা বলতে বলতেই দুটি লোক খুব ঝগড়া করতে করতে ঐ সর্দারের কাছে এগিয়ে এল। আলেকজাণ্ডারেরও খুব কৌতূহল হল। তিনিও শুনতে লাগলেন। এ দুটি লোকের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে। প্রথম লোকটি দ্বিতীয় লোকটিকে একটি জমি বিক্রি করেছে। দ্বিতীয় লোকটি এই জমিটি কেনার পর চাষ করতে গিয়ে মাটির তলা থেকে একটি বাক্স পায়। বাক্সটিতে হীরা, জহরৎ, মণিমাণিক্যে ভর্ত্তি। বাক্সটি পেয়ে দ্বিতীয় লোকটি প্রথম লোকটিকে ফেরৎ দিতে চাইছে এবং সেই নিয়ে এই বিচিত্র ঝগড়ার সূত্রপাত। প্রথম লোকটি বলছে, আমি ওকে জমিটি বিক্রি করে দিয়েছি। এরপরে ও জমির মধ্যে যাই পাক সেটাতে ওরই অধিকার। আমার পাওয়ার কথা নয় কেননা জমিটা আমি ওকে বিক্রি করে দিয়েছি।” কিন্তু দ্বিতীয় লোকটি বলছে, “না সর্দার, আমি তো ওর কাছে শুধু জমিটা কিনেছি। এরপ জমির তলা থেকে যদি কিছু বেরোয়। সেটা ওর পাবার অধিকার। আমার নয় আমি এ কথা ওকে বলছি, তো ও শুনছে না আপনি এর বিচার করুন। আলেকজাণ্ডারের খুব কৌতূহল হল, “দেখা যাক সর্দার কি বিচার করেন।” সর্দার বললেন, “দেখো বাবা, তোমার ঘরে একটি মেয়ে আছে যাকে বিয়ে দিতে চাও।”, আর অপর লোকটিকে বললেন, “দেখো বাবা, তোমারও এক ছেলে আছে যার জন্য তুমি পাত্রী খুঁজছ। তা আমি বলি কি তুমি মেয়েটিকে ওর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দাও, সঙ্গে গয়নার বাক্সটি যৌতুক দিয়ে দাও। তাহলেই তোমাদের ঝামেলা মিটে যাবে। তোমরা কেউ কারুর পর থাকবে না, এক হয়ে যাবে।” এই বলে একটু মুচকি হেসে আলেকজাণ্ডারের দিকে ফিরে একটু মুচকি হেসে বললেন, “রাজা, তোমাদের দেশে এরকম ঘটনা হলে, কি বিচার করো?” আলেকজাণ্ডার বললেন, “আমাদের দেশে এরকম ঘটনা ঘটলে হীরা মণি মাণিক্যে ভরা ঐ বাক্সটি রাজা পেতো আর যে ঐ জহরতের বাক্স রাজাকে না দিতো, তাকে দণ্ড ভোগ করতে হত।”
সর্দার ভাবল, “ কি নিষ্ঠুর নিয়ম! একজন রাজার কি অধিকার আছে প্রজার সম্পত্তি ভোগ করবার?এইরকম রাজা তো রাজা নয়, তস্কর। প্রকৃত রাজা প্রজার ধন সম্পত্তি কখনও কেড়ে নেয় না, তিনি প্রজার ধনসম্পত্তি রক্ষা করেন। এটিই তার কর্তব্য যাতে প্রজা সুখে থাকে।”
প্রশ্নঃ
- সর্দার আলেকজান্ডারকে কেন সোনা খেতে দিয়েছিল?
- দুজন লোক কি কারণে ঝগড়া করছিল?
- বিচারে কি সিদ্ধান্ত হল?
- আলেকজান্ডার সর্দারকে কি বললেন?
- প্রকৃত রাজা কে?