ভূমিকা অভিনয় – রূপরেখা
চরিত্রাভিনয় হল এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা পরিস্থিতি সম্পর্কে ভাবতে শেখে এবং তারপর তা অভিনয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করে। এটা তাদের শেখায় কিভাবে অন্য কারো অবস্থানে ও চরিত্রে নিজেকে একাত্ম করতে হয় ও অন্যদের প্রতি সহমর্মিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হয়। এটি সৃষ্টিধর্মী চিন্তাকে উৎসাহিত করে ও আত্মপ্রত্যয় বাড়িয়ে তোলে।
চরিত্রাভিনয় বিভিন্ন ধরণের হতে পারে :
- পরিস্থিতির মধ্য থেকে বেড়িয়ে আসা সাধারণ অভিনয়
- মূকাভিনয় ( কথা না বলে বিভিন্ন পরিস্থিতিকে অভিনয়ে প্রকাশ করা)
- বেতার অভিনয়( আড়ালে থেকে বিভিন্ন পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসা অভিনয় যেখানে শ্রোতারা শুধু শুনেই বিষয় অনুধাবন করে ।)
- কল্পনা নির্ভর আরও বিভিন্ন ধরনের চরিত্রাভিনয় উপস্থাপন করা যেতে পারে।
চরিত্রাভিনয়ের পদ্ধতি
যখন ছেলেমেয়েরা চরিত্রাভিনয়ে নতুন আসে, তখন তাদের যে গল্পটি দেওয়া হয় সেটা থেকে চরিত্রাভিনয়ের মধ্য দিয়েই কাজ শুরু করতে পারে। যখন তারা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়, তখন তারা নিজস্ব ধারণা অনুসারে ও ধারনার যথাযথ ব্যাখ্যা ও সর্বশেষ সিদ্ধান্তে উপনীত হবার কারণ প্রদর্শন করে, গল্পের উপসংহার পরিবর্তন ও তাৎক্ষণিক সৃজনাত্মক সংযোজন করতে শুরু করে।
চরিত্রাভিনয় ও মনোভাব পরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য
মনোভাব পরীক্ষার ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির একটা তালিকা দেওয়া হয় এবং শিশুটিকে বলা হয় প্রতিটি পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করতে। আর চরিত্রাভিনয়ের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের অভিনয় করার জন্য শুধুমাত্র একটি পরিস্থিতিকেই বেছে নেওয়া হয়। মনে করো, আমরা ‘সততা’ এই মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করছি। সেক্ষেত্রে, আমরা ছাত্রছাত্রীদের সেই সব পরিস্থিতি বা প্রেক্ষাপটে অভিনয় করতে বলতে পারি যেখানে তাদের মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ বা পারস্পরিক মতবিরোধের মোকাবিলা করতে হতে পারে যেহেতু সেখানে ‘সততা’ এই মূল্যবোধ রক্ষার প্রশ্ন উঠে আসে। উদাহরণ স্বরূপ, ছেলেমেয়েদের নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে অভিনয় করতে হতে পারে, যেমন:
- কোনো সমাধানের উপায় না বলে কোনো সমস্যার উপস্থাপন ( উদাহরণ স্বরূপ: একজন শিশু বিস্মিত দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ভাবছে তার এখন কি করা উচিত। পরীক্ষা কক্ষে আমার কি অসৎ উপায় অবলম্বন করা উচিত, নাকি উচিত না ?)
- এক ধরনের আচরণের উপস্থাপন (উদাহরণ স্বরূপ : শিশুটি সত্যি পরীক্ষায় আসৎ উপায় অবলম্বন করেছে।)
- সঠিক আচরণ কি হওয়া উচিত তার উপস্থাপন(উদাহরণ স্বরূপ : নকল করার বা অসৎ উপায় অবলম্বন করার সুযোগ থাকা সত্বেও শিশুটি সৎ আচরণের নিদর্শন রাখলো।)
ওপরে উল্লিখিত বিষয়গুলির মধ্যে, শুধু মাত্র চরিত্রাভিনয় থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রাভিনয়ের বিশ্লেষণ। এই বিশ্লেষণ বলে দেয় কেন একজন ব্যক্তির সততার মত মূল্যবোধকে গ্রহণ করা উচিত ও এই মূল্যবোধকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরে ও মান্যতা দিয়ে সব কাজ করা উচিত। যদি অনেক ছাত্রছাত্রী থাকে, তবে সততার মত মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির উপস্থাপন করতে পারি এবং তা বিশ্লেষণ করতে পারি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা মূল্যবোধের গুরুত্ব ও ব্যক্তি জীবনে তা প্রয়োগ সম্পর্কে আরও ভালো ভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
একটি বিশেষ মূল্যবোধ তুলে ধরেছে এরকম চরিত্রাভিনয় নিম্নলিখিত উপায়ে সম্পন্ন করা যেতে পারে :
- গুরু প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি প্লট বা পটভূমি দেবেন অভিনয় করার জন্য ।
- গুরু শিক্ষার্থীদের বিষয় বা গল্প দেবেন এবং শিক্ষার্থীরা নিজস্ব প্লট বা পটভূমি রচনা করে অভিনয় করবে ।
- প্রতিটি গ্রুপকে পরিস্থিতি সম্পর্কিত একটি মূল্যবোধকে বেছে নিতে বলা হবে এবং তারপর তারা বিষয় গল্প প্লট বা পটভূমির বিষয়ে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবে।
পদ্ধতিঃ
- বিষয়বস্তু বা গল্প নির্বাচন হয়ে গেলে ছাত্রছাত্রীদের পাঁচ ছয় বা যে কোনো সম্ভাব্য সংখ্যার কয়েকটি দলে বিভক্ত করতে হবে। প্রতিটি দলকে বলা হবে একই মূল্যবোধের (ধরা যাক সেটা সততা) ওপর নির্ভর করে একটি পরিস্থিতি অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে। দুএকটি দলের পরিস্থিতির পটভূমি হবে গৃহ, আর দুএকটি দলের পরিস্থিতির পটভূমি হবে পাড়া, প্রতিবেশীগন ও আশপাশের অঞ্চল। এই চরিত্রাভিনয়ের প্রস্তুতির জন্য তাদের দশ মিনিট সময় দেওয়া হবে।
- প্রতিটি দলকে তাদের চরিত্রাভিনয় উপস্থাপন করতে বলো। এবিষয়ে যত্ন সহকারে লক্ষ্য রাখতে ও নিশ্চিত হতে হবে যে একটি দল যখন চরিত্রাভিনয় উপস্থাপন করবে, অন্য দলগুলো যেন তা মনোযোগ দিয়ে দেখে । প্রতিটি চরিত্রাভিনয়ের শেষে, ওই পরিস্থিতিতে সততার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার জন্য চরিত্রাভিনয় বিশ্লেষণ করতে হবে। নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির মাধ্যমে তা করা যেতে পারে:
- কেন নাটকে ওই চরিত্রগুলি ঐ বিশেষ ধরনের অভিনয় করেছিলো?
- তুমি কি মনে করো এটা সঠিক আচরণ ?
- প্রদত্ত পরিস্থিতিতে চরিত্রগুলির আর কি বিকল্প কার্যক্রম হতে পারতো ?
এটা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে এই ধরনের বিশ্লেষণে [ চরিত্রাভিনয় ও মনোভাব পরীক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই ] বালবিকাশ গুরুরা এই বিষয়টি যেন মনে রাখে যে তারা যেন সহকারী বা সাহায্যকারী হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকে এবং স্নেহের সঙ্গে তাদের পথ নির্দেশ করে যাতে তারা নিজেদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে পারে এবং নিজস্ব ভাবনা বা মূল্যবোধ ছাত্রছাত্রীদের ওপর না চাপিয়ে দিয়ে গুরুদের উচিত তাদের সাহায্য করা যাতে তারা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে।
চরিত্রাভিনয়ের উপকারিতা:
- আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে
- বৃহত্তর সৃজনশীল ভাবনাকে উৎসাহিত করে
- ভালো মন্দ/ ঠিক ভুল থেকে সঠিক ও ভালোকে বেছে নেবার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে
- সহযোগিতা করতে শেখে