হরির দাতা শ্লোকের অর্থ।
হরির্দাতা হরির্ভোক্তা হরিরন্নং প্রজাপতিঃ। হরির্বিপ্রশরীরস্তু ভুংক্তে ভোজয়তে হরিঃ।।
হরি, সকল জীবের প্রভু, হলেন দাতা, উপভোক্তা ও স্বয়ং খাদ্যবস্তু।
শরীর হল হরির একটি অংশ, হরি একাধারে সেই, যে ভোজন করেন এবং যে ভোজন করান।
আমরা খাওয়ার আগে যখন খাদ্য ভগবানকে উৎসর্গ করে খাই, তখন সেটা আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয় এবং সকল অমেধ্য (impurities) শূন্য হয়ে যায়। খাদ্য হল ভগবান প্রদত্ত উপহার। আমাদের প্রার্থনা সহযোগে ও কৃতজ্ঞতার ভাব নিয়ে খাদ্য গ্রহন করা উচিৎ। খাদ্য হল সেই স্ফূলিঙ্গ যা জীবনের শিখাটি জ্বেলে দেয়। আমাদের খাদ্য বস্তুর সম্মান করা উচিৎ। আমাদের খাদ্য অপচয় করা উচিৎ নয়। অবশিষ্ট খাদ্য পশু পাখিদের খাওয়ানো উচিৎ। প্রভু স্বয়ং আমাদের শরীরে বসবাস করেন এবং এই খাদ্য গ্রহণ করেন। সুতরাং আমাদের তিন ধরনের খাদ্য শুদ্ধি পালন করা উচিৎ।
আমাদের দেহের অভ্যন্তরে বসবাসকারী ঈশ্বরই এই খাদ্য গ্রহণ করেন।সুতরাং আমাদের খাদ্য সম্বন্ধে তিন প্রকার শুদ্ধতা বিধি পালন করা উচিত।
পদার্থ শুদ্ধি: যে সামগ্রী দিয়ে খাদ্য প্রস্তুত হচ্ছে সেগুলি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।
পাত্র শুদ্ধি: যে পাত্রে রন্ধন করা এবং খাওয়া হবে সেগুলি পরিষ্কার হতে হবে। এবং পরিবেশটি ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিৎ।
হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে খাদ্য যখন ঈশ্বরকে নিবৈদন করা হয় এবং তারপর ওটি ঈশ্বরের গ্রহণ করার পর ওটি পবিত্র হয়ে যায় তখন ওই খাদ্যটির মধ্যে দৈব শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে আর সকল প্রকার মন্দ প্রভাব থেকে মুক্ত হয় যা হয়তো খাদ্যটির সাথে যুক্ত ছিল।
Aভারতীয় দ্রষ্টাদের মতে যে খাদ্য আমরা গ্রহণ করি, যে শক্তি সকল প্রাণীর মধ্যে বিদ্যমান আর এই সৃষ্টির মধ্যে সকল বস্তুর ভিত্তির উৎস হল ভগবান। আর এই মৌলিক সত্যটা ভুলে যাচ্ছি বলেই বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত দুর্ভিক্ষে দ্বন্দ্বে, যুদ্ধে ও মানসিক বিপর্যয়ে।
মানুষ কি যে জমিতে ফসল ফলে সৃষ্টি করতে পারে? আমরা কি জল উৎপাদন করতে পারি? আমরা কি অরণ্য যার মধ্যে অগ্নি সুপ্ত আছে, সৃষ্টি করতে পারি? এ সকলই ঈশ্বরের সৃষ্টি আর মানুষের ক্ষমতার নাগালের বাইরে।
আমরা যদি ঈশ্বরকে খাদ্য নিবেদন করি, তাহলে সকল প্রকার মন্দ প্রভাব দূরীভূত হবে এবং প্রসাদে রূপান্তরিত হবে, যা আমাদের শারীরিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক পুষ্টি সাধন করে।