ঈর্ষা ধ্বংসের দূত
এক গ্রামে নাধব আর কেশব নামে দুজন কৃষক বাস করতো। মাধৰ বুদ্ধিমান, কঠোর পরিশ্রমী ছিল, সব সময়েই সে সন্তুষ্ট আর সুখী থাকত। কেশব ছিল অলস, সব সময়েই তার উদ্বেগ আর দুঃখ-দুঃখ ভাব থাকতো। সে মাধবকে এত হিংসা করতো যে, মাধবকে দেখলেই গায়ে জ্বালা ধরতো। মাধবের পতনের জন্য সে ভগবানের কাছে প্রার্থনা পর্যন্ত করতো।
কিন্তু, ভগবান মাধবের উপর দয়াপরবশ ছিলেন, মাধব চাইতো যে গ্রামের প্রত্যেকেই যেন তারই মতন সুখী হয়। একবার সে তার বাগানে বহু সপ্তাহ কঠিন পরিশ্রম করে দুষ্প্রাপ্য এক ধরণের বিরাট একটা কুমড়ো ফলালো। এর খোসার উপরে রামধনুর সাতটা রং ছিল। এতে মোগরা ফুলের মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো, আর মধুর মতন এর স্বাদ ছিল। আরো মজা হলো এই যে, এর চারটে পা, একটা শুঁড় আর একটা লেজ ছিল যাতে একে একটা হাতীর মতন দেখতে লাগছিলো।
মাধবের মনে হলো যে, এই আশ্চর্য কুমড়ো রাজাকে উপহার দেওয়া চলে। সে কুমড়োটা নিয়ে রাজধানীতে গিয়ে রাজার পায়ের কাছে তার নজরানা হিসেবে রাখলো। রাজা এই অসাধারণ উপহার পেয়ে এত খুসী হলেন যে, রাজকীয় দান হিসেবে তিনি তাকে এক জীবন্ত হাতী দিলেন।
কেশবের কানে এই খবর গেলে, তার এত ঈর্ষা হলো যে, সে সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারলো না। সে ভেবে চললো, “মাধব যা করেছে, তার চাইতে রাজাকে আমার অনেক বেশী খুসী করতে হবে। তাহলে মাধবের চাইতে রাজা আমায় আরো বেশী দামী জিনিষ দেবেন। একটা তরকারীর হাতী যদি তাঁকে এতো খুসী করে, একটা জীবন্ত হাতী তাঁকে আরো বেশী খুসী করবে। এর বদলে তিনি আমাকে দু’একটা গ্রাম দিয়ে, মস্ত এক জমিদারও করে দিতে পারেন।
পরদিন কেশব তার ক্ষেত খামার, গরু, ষাঁড়, ছাগল, ভেড়া সমস্ত বিক্রী করে দিলো। এই ভাবে সে যা কিছু টাকাকড়ি পেলো তার সবটা দিয়ে এক বিশাল হাতী কিনে নিয়ে রাজার কাছে গেল। রাজা মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না যে, একজন গ্রামের চাষী তাকে একটা হাতী উপহার দিচ্ছে কিসের জন্যে! অগত্য। তিনি তার বিজ্ঞ মন্ত্রীকে ব্যাপারটা দেখতে বললেন, আর এই চাষীকে যোগ্য উপহার কি দেওয়া যায় সে সম্বন্ধে উপদেশ চাইলেন।
বিজ্ঞ মন্ত্রী কেশবের সঙ্গে গল্পগাছা শুরু করে দিলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারলেন যে, ঈর্ষার তাড়নায় কেশব রাজাকে হাতী উপহার দিয়েছে। অতএব, তিনি রাজাকে গিয়ে বললেন, “মহারাজ, আপনি আগের চাষীকে কুমড়োর বদলে সুন্দর এক হাতী দিয়েছেন, কাজেই এবার এই চাষীকে এর হাতির বদলে একটা সুন্দর কুমড়ো দিয়ে দিন।”
যখন কেশব রাজকীয় উপহার হিসেবে একটি সাধারণ কুমড়ো পেল, তখন সে একেবারে ভেঙে পড়লো। সে তার যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রী করে দিয়েছে, এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেল—সবের মূলেই তার নিজের ঈর্ষা।
প্রশ্নঃ
- মাধব আর কেশবের মধ্যে কি তফাৎ দেখতে পাচ্ছো? কাকে বেশী পছন্দ করো? কেন?
- মন্ত্রী কেশবকে শুধুমাত্র একটা কুমড়ো দিতে বললেন কেন?
- ধর তুমি স্কুলে একটা পুরষ্কার পেলে; তোমার ক্লাশের কোন সহপাঠী তোমাকে হিংসা করতে লাগলো। সেই সহপাঠীকে উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে একটা চিঠি লেখ।