অহংকারের পরিণাম পতন
একদিন ভগবান কৃষ্ণ ও অর্জুন যমুনা নদীর তীর ধরে হাঁটছিলেন। নদী দেখে কৃষ্ণর মনে তাঁর ছেলেবেলার লীলাখেলার সুখস্মৃতি ভেসে উঠলো। অর্জুন অবশ্য, কয়েকদিন বাদেই যা ঘটতে যাচ্ছে- সেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কথা চিন্তা করছিলেন। কৌরবদের চিন্তা তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে ধনুর্ধর হিসাবে তার নিজের বীরত্ব ও কৌশল সম্বন্ধে সচেতন করে তুললে। অর্জুন মনে মনে বললেন, “ধনুকধারী হিসাবে পৃথিবীতে আমার সমান আর কেউ নেই।” প্রবহমান যমুনাকে দেখে তার মনে হলো যে, প্রশস্ত নদীর উপরে তিনি তীরের সেতুও তৈরী করে দিতে পারেন। এর পরেই এক আশ্চর্য চিন্তা তার মনে এলো। তিনি ভাবলেন, “তাহলে, রাম ও রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য লঙ্কা যেতে গিয়ে যা করতে পারেননি, আমি তাই করতে পারি।”
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মনের গর্ব ও অহংকারের কথা জানতে পারলেন। সেজন্যে তিনি বললেন, “অর্জুন, তুমি নিজের মনে হাসছো বলে মনে হচ্ছে। আশা করি, আমার কোন ভুল করার কথা ভাবছে না?”
অর্জুন একটু থতমত খেয়ে গেলেন, পরে বললেন, “সত্যিই আমি হাসছিলাম। কিন্তু তার কারণ, আমি ভাবছিলাম যে শ্রীরাম লঙ্কা যাওয়ার জন্যে বানরের দিয়ে পাথরের সেতু তৈরী করিয়েছিলেন। আমি যদি সেখানে থাকতাম তাহলে চোখের পলকে তার জন্যে তীর দিয়ে সেতু বানিয়ে দিতাম।” শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের অহংকার চূর্ণ করবেন ঠিক করে, অর্জুনকে বোঝাতে লাগলেন যে রামের তারের সেতু না করার কারণ হলো এই যে, বলবান বানর সৈন্যদের ভারে ঐ সেতু ভেঙে পড়ে যেতো। অর্জুনের অহঙ্কার কিন্তু, এতে নরম হলো না। তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন, ”তার মানে, রাম বানরদের ভার বইবার মতো, সেরকম শক্ত করে তীরের সেতু তৈরী করতে পারতেন না।
কৃষ্ণ এক মুহূর্ত চিন্তা করলেন, তার পর প্রফুল্লভাবে বললেন,” রামের বানর সৈন্যদের একজন এখনও জীবিত। তুমি যমুনা নদীর উপর একটা তীরের সেতু তৈরী করে ফেল, আমি তাকে তোমার তীরের তৈরী সেতুর শক্তি পরীক্ষা করতে ডাকবো। অর্জুন গর্বিতভাবে কৃষ্ণের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মেনে নিলেন।
তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রশস্ত নদীর উপরে তীরের সেতু তৈরী করে ফেললেন। কৃষ্ণ ডাক দিলেন, “হনুমান, তাড়াতাড়ি চলে এসো।” এমনি, এক লম্বা বানর কৃষ্ণের সামনে হাজির হয়ে তার পায়ে প্রণাম করলো। কৃষ্ণ তাকে সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে যেতে বললেন।কৃষ্ণ কিরকম অস্বস্তিতে পড়বেন, সে কথা ভেবে অর্জুন মনে মনে হাসলেন। একটু ইতস্তত করে, হনুমান তাঁর। ডান পা সেতুর উপর রাখলেন। কিন্তু তাঁর আর একটা পা তোলার আগেই গোটা সেতু মড়মড় শব্দে ভেঙ্গে পড়ে গেলো। এবার কৃষ্ণর হাসার পালা। অর্জুন এত লজ্জা পেলেন যে তিনি তাঁর তীর ধনুক ছুড়ে ফেলে দিয়ে, শ্রীকৃষ্ণের পায়ের উপর পড়লেন।
কৃষ্ণ অর্জুনকে সাবধান করে দিলেন ও তাকে উপযুক্ত পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন, “তুমি নিরুৎসাহ হয়োনা অর্জুন। শ্রীরামও এইসব বানরদের উপযুক্ত শক্ত তীর-সেতু গড়তে পারেন নি। সেক্ষেত্রে, তুমি পারছো না বলে লজ্জিত হওয়ার কি আছে। কিন্তু এই শিক্ষাকে মনে রেখো। মনের মধ্যে কখনো অহংকার, আত্মশ্লাঘাকে জায়গা দিও না। একজন বীবের পক্ষে এরা জঘন্যতম শত্রু। আর এরা তার নিশ্চিত পতন ঘটাতে পারে।”
অর্জুন তখনই কৃষ্ণের উপদেশ মেনে নিলেন। এজন্যই অর্জুন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তাঁর রথের পতাকায় হনুমানের প্রতীক চিহ্ন দিয়ে রেখেছিলেন,সেই পতাকার নাম দিয়েছিলেন কপি-ধ্বজ (বানর-পতাকা)।
প্রশ্নঃ
- অহংকার ও আত্মশ্লাঘা ক্ষতিকর কেন? তারা কি ক্ষতি করে?
- কৃষ্ণ অর্জুনের ভিতরে কি পরিবর্তন এনে দিলেন?
- মনে কর তোমার ক্লাসে যে ছাত্র প্রথম হয়, তার মনে অহংকার এসেছে, তখন তার কি অবস্থা হবে?