অশান্ত যুবক
নরেন শক্তিমান যুবকে পরিণত হলেন। তাঁর শারীরিক গঠন ছিল মল্লবীরের মতো, গলার স্বর ছিল অনুনাদী এবং বুদ্ধি ছিল দীপ্ত ও তীক্ষ্ণ। তিনি খেলাধুলায়, দর্শন-শাস্ত্রে ও সংগীতে পারদর্শী’ ছিলেন এবং সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধদের অবিসংবাদী নেতা ছিলেন। কলেজে পাশ্চাত্য ভাবধারা অধ্যয়ন ও তাতে অভিনিকিট হওয়ার ফলে, তাঁর মধ্যে এক সমালোচনার মানসিকতা গড়ে উঠেছিল। একদিকে আধ্যাত্মিকতার প্রতি তাঁর সহজাত প্রবণতা ও প্রাচীন ধর্মীয় রীতিনীতি ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অপরদিকে তাঁর যুক্তিবাদী মন যে-সব বিষয়ে প্রত্যক্ষ এবং অকাট্য প্রমাণ পেতে চাইত- এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব তাঁর মনে আলোড়ন জাগাত। এই অশান্ত অবস্থায় যখন তিনি দিন কাটাচ্ছিলেন, সেই সময় ব্রাহ্মসমাজের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। ব্রাহ্মধর্ম তখন হিন্দু ধর্ম’কে পুনগঠনের উদ্দেশ্যে আমাদের প্রাচীন দর্শ’ন ও ধর্মের মধ্যে পাশ্চাত্য আদর্শ ও খ্রীস্টান আস্তিক্যবাদকে অনুপ্রবিষ্ট করাবার জন্য চেষ্টা করছিল। সেই সমর ব্রাহ্মধর্ম’ সামাজিক-ধর্ম-সম্বন্ধীয় আন্দোলন হিসাবে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জ’ন করেছিল। এই ধর্ম’ নিরাকার ঈশ্বরবাদ বিশ্বাস করত, মূর্তিপূজার নিন্দা করত এবং বহু সামাজিক পনর্গঠনের উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে নিয়োজিত করত। বহু, প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
বিবেকানন্দ ব্রাহ্মধর্ম’কে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু যতই তিনি গভীরে প্রবেশ করছিলেন ততই তিনি অনুভব করছিলেন যে, এই ধর্মে’র মধ্যে কি একটি জিনিসের অভাব রয়ে গেছে। তিনি ব্রাহ্মসমাজের প্রবীণ অভিজ্ঞদের কাছে ব্যাপারটি বোঝার জন্য আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করেন, কিন্তু কেউই তাঁর প্রশ্নের সন্তোষজনক ও প্রত্যয়যুক্ত উত্তর দিতে পারেন নি, বিশেষ করে ভগবানের অস্তিত্ব সম্বন্ধে। এর ফলে তাঁর আধ্যাত্মিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেল।
এই সময়ে তাঁর মনে পড়েছিল অধ্যাপক উইলিয়ম হ্যাস্টির কথা, যিনি কবি ওয়াড’সওয়ার্থে’র ‘The Excursion’ শীষ’ক কবিতাটি পড়ানোর সময় কবির তীব্র আনন্দের অনুভুতির বিষয়ে বর্ণনা করেছিলেন। অধ্যাপক হ্যাস্টি বলেছিলেন, ‘এই অভিজ্ঞতা কেবলমাত্র মনের পবিত্রতা ও কোনো বিষয়ে গভীর মনোসংযোগের ফল এবং ইদানীং কালে এই জিনিস প্রায় বিরল। আমি একজনকেই দেখেছি যাঁর এই ধরনের মানসিক প্রশান্তিলাভ হয়েছে- তিনি হলেন দক্ষিণেশ্বরের শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। তুমি যদি সেখানে যাও, তবে তুমিও বুঝতে পারবে।’ এই কথাগুলি ছিল সত্যই ভবিষ্যদ্বানী-মূলক।
দিব্যোন্মাদ রামকৃষ্ণের সহিত সাক্ষাৎ এবং তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ
কখনো বিশেষ একজনের সঙ্গে অপরের সাক্ষাৎ এতই গুরুত্বপূর্ণ হয় যে সময়ের সীমা ছাড়িয়ে তা অনন্তকালের বস্তু হয়ে দাঁড়ায়; যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়- শ্রীরামচন্দ্রের সঙ্গে হনুমানের প্রথম সাক্ষাৎ। যদিও তাঁরা পরস্পরের অপরিচিত ছিলেন, তবুও চিরদিনের জন্য তাঁরা অচ্ছেদ্যবন্ধনে আবন্ধ হয়েছিলেন। যেমন হনুমানের নাম রামনাম ছাড়া উল্লেখন হতে পারে না, তেমনি রামনামও। রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের মিলনও এমনিভাবেই ভারতের আধ্যাত্মিক-ভাগ্যাকাশে অভূতপূর্ব’ তাৎপর্যে’র সূচনা করেছিল। এর ফলে যে শুধু বিবেকানন্দের জীবনধারাই পরিবর্তি’ত হয়েছিল তা নয়, হিন্দুধর্মের ইতিহাসের নবজাগরণের ফলে নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছিল। ১৮৮১ খ্রীস্টাব্দে আধুনিক ভারতের দিব্যপুরুষ ও তাঁর বাণী-বাহকের মধ্যে এই ঐতিহাসিক মিলন সংঘটিত হয়েছিল।
সাক্ষাৎ হওয়ার কিছুদিন পরেই নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণকে সোজাসুজি প্রশ্ন করেন- ‘মহাশয়। আপনি কি ভগবান দেখেছেন?’ এই প্রশ্ন তিনি পূর্বেও অনেক জনপ্রিয় ধর্মী’য় নেতাকে করেছিলেন কিন্তু কোথাও সদুত্তর পান নি। কিন্তু রামকষ্ণে প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দিলেন, ‘নিশ্চয়ই, তোমায় এখানে যেভাবে দেখছি বরং তার চেয়েও আরো ভালো করে তাঁকে দেখেছি।’ তারপর তিনি আরো বললেন- ‘ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারা যায় এবং আমি তোমার সঙ্গে যেমন কথা বলছি, তেমনি করে সবাই তাঁকে দেখতে পারে ও কথা বলতে পারে। কিন্তু কে তা করছে? লোকেরা তাদের স্ত্রীপুত্রের জন্য, ঐশ্বর্যের বা সম্পত্তির জন্য কেঁদে ভাসায়, কিন্তু ভগবানের জন্য কে তা করে? যদি সত্যই কেউ তাঁর জন্য কাঁদে, তবে নিশ্চয়ই তিনি দেখা দেন।’ রামকৃষ্ণের নির্মল আন্তরিকতাপূর্ণ মনে তাঁর কথার সত্যতা সম্বন্ধে প্রত্যয় জন্মাল। মুখচ্ছবি দেখে নরেন্দ্রনাথের এতদিন পরে নরেন্দ্রনাথ এমন একজনের সন্ধান পেলেন যিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তাঁকে জানান যে ঈশ্বর অবশ্যই বিদ্যমান এবং ধম’শাস্ত্রসমূহ কাম্পনিক মায়াজাল নয়, পরন্তু এগুলি সেই শাশ্বত সার্বিক সত্য যাঁকে বলা হয় ঈশ্বর। নরেন্দ্রনাথের সকল সন্দেহের নিরসন হল তাঁর বিধিনির্দিষ্ট গুরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর।
শিষ্যের শিক্ষা সুনির্দিষ্ট পন্থায় আরম্ভ হল। দ্বিতীয়বার সাক্ষাতের সময়ে নরেন্দ্রনাথ ঐ সিদ্ধপুরুষের আধ্যাত্মিক শক্তির কথা আরো সুস্পষ্ট ভাবে অনুধাবন করলেন। নরেন্দ্রনাথ সে ঘটনা আমাদের জন্য যথাযথ লিপিবদ্ধ করে গেছেন:
‘নিজের মনে কি বলতে বলতে আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে তিনি আমার কাছে এগিয়ে এলেন। আমি ভাবলাম হয়তো তিনি অদ্ভুত কিছু করবেন। কিন্তু চোখের নিমেষ মধ্যে তিনি তাঁর ডান পা আমার গায়ে তুলে দিলেন। ঐ স্পর্শে তখনি আমার এক অভিনব অনুভূতি হল। খোলা চোখে দেখলাম যে, ঘরের দেওয়াল ও অন্যান্য সব কিছু প্রবল বেগে ঘূর্নিত হয়ে অদৃশ্যে হয়ে গেল এবং আমার অস্তিত্বসহ সমগ্র জগত যেন এক রহস্যময় সর্বব্যাপী শুন্যতার মধ্যে নিমগ্ন হওয়ার উপক্রম করল। আমি খুবই ভর পেরে ভাবলাম বোধ হয় আমার মৃত্যু উপস্থিত, কারণ আত্মসত্তার বিলোপ মৃত্যুর চেয়ে কিছু, কম নয়। নিজেকে সংযত করতে না পেরে আমি চীৎকার করে উঠলাম, “এ আমায় কি করেছেন? বাড়িতে আমার মা বাবা রয়েছেন।” এ কথা শুনে হেসে তিনি আমার বুক চাপড়ে দিয়ে বললেন, “ঠিক আছে, এখন এ পর্যন্ত্য থাক। সময়ে সবই হবে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে তাঁর বলার সঙ্গে সঙ্গে আমার সেই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা অদৃশ্য হয়ে গেল। আবার আমি প্রকৃতিস্থ হয়ে গেলাম এবং ঘরের বাইরের ভিতরের সব কিছুই আগের মতো হল। আমার এখন এই ঘটনা সম্বন্ধে বলতে যা সময় লাগল, তার চেয়েও অল্প সময়ের মধ্যে ঐ ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু আমার মনকে এটা গভীরভাবে নাড়া দিল।’এই সেই অতীন্দ্রিয় স্পর্শ’, যা অজ্ঞেয়বাদী নরেন্দ্রনাথকে স্বামী বিবেকানন্দ নামক সেই বিশ্ববিখ্যাত সন্ন্যাসীতে পরিণত করল, যিনি মাত্র ৪০ বৎসর বয়সে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্য্যন্ত অসংখ্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাসীর হৃদয়ে ঐশ্বর ভাবের সুপ্ত পুতাগ্নিকে প্রদীপ্ত করে তুলেছিলেন।
গুরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর, নরেন্দ্রনাথ শিষ্যত্ব গ্রহণের পাঁচ-ছয় বৎসর পর্য’স্ত তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার বা দুইবার করে দক্ষিণেশ্বরে যেতেন এবং মাঝে মাঝে সেখানে কয়েকদিন থাকতেন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ তাঁর দিব্যজ্ঞানের উন্মেষ হচ্ছিল, যে পর্যন্ত না তাঁর গুরু তাঁকে নিজের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী বলে গণ্য করেছিলেন। প্রথম দিকে নরেন্দ্রনাথ গুরুদেবের অনেক ধারণাকে হেসে উড়িয়ে দিতেন, কারণ সেগুলি ছিল ব্রাহ্মসমাজ-প্রচলিত ধারণার পরিপন্থী এবং নরেন্দ্রনাথ তখনো ব্রাহ্মসমাজের সভ্য ছিলেন। কিন্তু এখানে তিনি দেখলেন এমন এক ব্যক্তিকে, তিনি যা বলেন নিজেই সে কথার অকাট্য প্রমাণ। নরেন্দ্রনাথ উপলব্ধি করলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে বুদ্ধি- বৃত্তির যে পর্যায়ে তিনি স্থিত সে পর্যায়ের পরিবর্তে তাঁর গুরুদেবের যে পর্যায়ে স্থিতি ও মানসিক বিচরণ, সেই আধ্যাত্মিক পর্যায়কে তিনি গ্রহণ করবেন।নরেন্দ্রনাথের পাশ্চাত্য দর্শনের জ্ঞান পরবর্তী’কালে বেদান্তকে বিশ্লেষণ করতে অনেক সাহায্য করল। তিনি অনুভব করলেন যে বেদান্ত যার বহিরঙ্গ প্রকাশ, সেই আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা সর্বাগ্রে তাঁকে অর্জন করতে হবে। শুধু তাই নয়, যে অভিজ্ঞতা গুরুদেব স্বয়ং তাঁকে ক্ষণেকের জন্য দিয়েছিলেন তাকে পরিপূর্ণ’ বিকশিত করে স্বকীয় করে তোলা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে নরেন্দ্রনাথের নিজের উপর।
নরেন্দ্রনাথের পিতার আকস্মিক মৃত্যু সমগ্র পরিবারকে বিচলিত করে তুলল। যদিও তাঁর পিতা উপার্জ’ন ভালোই করতেন তবুও তাঁর মৃত্যুতে সমগ্র পরিবার কপর্দকশূন্য অবস্থায় পড়ল। এমন-কি, গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যাপারও দুরূহ হল। নরেন প্রায়ই উপবাসী থাকতেন এবং ক্ষুধার জ্বালা হাসিমুখে সহ্য করে মাকে মিথ্যা বলতেন যে তিনি বন্ধুর বাড়িতে আহার করে এসেছেন; কারণ তিনি ভাবতেন তাঁর সামান্য খাদ্যের অংশটুকুও যাতে অন্য পরিজনরা গ্রহণ করে ক্ষুধার জ্বালা কিছু শান্ত করতে পারে।
নরেন্দ্রনাথ দুই-একবার দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর মন্দিরে গিয়ে তাঁর পরিবারের দুঃখ মোচনের জন্য মায়ের কাছে প্রার্থনা করার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর গুরুরও এ বিষয়ে সম্মতি ছিল। যদিও নরেন্দ্রনাথ পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য অর্থে’র অনটন প্রচণ্ড ভাবে অনুভব করতেন, তবুও তিনি মা কালীর কাছে কোনো ঐহিক ঐশ্বর্য’ কামনা করতে পারতেন না; যখনই তিনি প্রার্থনা করতে যেতেন তখনই তিনি জ্ঞান ও ভক্তি কামনা করতেন। গুরুর পায়ে আত্মসমর্পণ নরেন্দ্রনাথকে আধ্যাত্মিক বোধে উদ্বুদ্ধ করল- সংশয় থেকে নিশ্চয়তায় পৌঁছলেন তিনি; তাঁর অহংভাবকে সম্পূর্ণ’ নিশ্চিহ্ন করে তাঁকে কুসুমকোমল করে তুলল; গুরুর স্নেহ তিনি লাভ করলেন এবং সেই স্নেহ ভালোবাসার প্রতিদানও সম্পূর্ণ ভাবে দিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের অসুস্থতা এবং কলিকাতার নিকটবর্তী কাশীপুরে তাঁর চিকিৎসার্থে’ অবস্থান নরেন্দ্রনাথকে গুরুদেবের কাছে শিক্ষা সম্পূর্ণ করার সুযোগ এনে দিল। এই সময়ে নরেনের মনে গভীর অধ্যাত্ম-শিখা জ্বলে উঠল- যার প্রকাশ ছিল নানাবিধ অভ্যাসের তীব্রতার মধ্যে। গুরুদেব এই সময়ে তাঁর অন্যান্য তরুণ-শিষ্যদের নরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বধীনে এনে দিয়েছিলেন। নির্বিকল্প সামাধি, যা চরম আধ্যাত্মিক উপলব্ধি- তার জন্য যখন গুরুর কাছে প্রার্থনা করলেন নরেন্দ্রনাথ, তখন তিনি তীব্র ভাবে নরেন্দ্রনাথকে তিরস্কার করে বললেন- ‘তোমার লজ্জা হওয়া উচিত। আমি ভেবেছিলাম যে, তুমি হাজার হাজার মানুষের সাংসারিক তীব্র দহন জ্বালা উপশমের জন্য প্রকাণ্ড এক বটবৃক্ষ হয়ে তোমার ছায়ায় তাদের আশ্রয় দেবে, কিন্তু এখন দেখছি যে তা না করে তুমি নিজের মুক্তি চাইছ।’ যা হোক, পরে তিনি স্বীকৃত হওয়ায় নরেন্দ্রনাথের প্রত্যাশিত উপলব্ধি হয়েছিল। গুরুদেব কিন্তু পরে নরেন্দ্রকে বলেছিলেন যে, ‘চাবি’ এখন থেকে তাঁর (গুরুদেবের) কাছে থাকবে, এবং যতদিন পর্য’স্ত যে উদ্দেশ্যে নরেন্দ্রনাথের জন্মগ্রহণ সেই আরব্ধ কর্ম’ (উদ্দেশ্য) সাধিত না হয়- ততদিন দুয়ার উন্মুক্ত হবে না। সমাধির তিন চার দিন আগে রামকৃষ্ণে নরেন্দ্রনাথের মধ্যে তাঁর সমস্ত শক্তি উজাড় করে ঢেলে দিলেন এবং বললেন, ‘আমি যে শক্তি তোমার মধ্যে সঞ্চার করে গেলাম, সেই শক্তি দিয়ে তুমি অনেক মহৎ কাজ সম্পাদন করবে; সেগুলি সমাধার পর তুমি যেখান থেকে এসেছ সেখানেই ফিরে যাবে।’
সন্ন্যাস গ্রহণ- ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যের কারাগার থেকে বিশ্বলোকে উত্তরণ
রামকৃষ্ণের সমাধির পর ১৮৮৬ খ্রীস্টাব্দের ১৬ই আগস্ট অনেক তরুণ ভক্ত বরানগরের এক ভগ্নপ্রায় গৃহে নরেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে সমবেত হলেন এবং সেখানে কঠিন আধ্যাত্মিক তপস্যা সাধনে যখন রত হলেন, সেই সময়ে রামকৃষ্ণ-ভ্রাতসংঘের সূচনা হয়। ঐ সময়ে নরেন্দ্রনাথ তাঁর অন্যান্য ভক্ত ভ্রাতা সহ আঁটপুরে গেলেন এবং সেখানে ‘ক্রিসমাস ইভের’ (১৮৮৬) দিন খোলা আকাশের নীচে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের চারিধারে সমবেত হয়ে সন্ন্যাসী- দের উপযুক্ত নূতন নাম গ্রহণ করলেন। সেই সময়ে নরেন্দ্রনাথের নাম হল স্বামী বিবেকানন্দ।
১৮৯০ খ্রীস্টাব্দে অবধি তাঁরা সাধনা করলেন। বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের বাণীকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো মহৎ কাজের জন্য সহযোগীদের একটি উপযুক্ত দল গঠনের প্রস্তুতি নিলেন। তাঁরা ঐ সময়ে অল্পদিনের জন্য ভ্রমণশীল সন্ন্যাসী হিসাবে কাছাকাছি স্থানে যেতেন।