বিজয়গৌরবে দেশে প্রত্যাবর্তন
বিবেকানন্দ তাঁর শিষ্যগণ সহ ১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি কলম্বোতে ফিরে আসেন। তাঁর আগমনীবার্তা ভারতে এসে পৌঁছেছিল। দেশবাসী তাঁকে অভিনন্দন জানাতে আগ্রহী হল এবং সর্ব’ত্রই অত্যধিক উৎসাহের সঞ্চার হল। সংযুক্ত ভারত তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করত এগিয়ে গেল, কারণ তিনি জাতির মনোবলের উন্নয়ন করেন এবং সেইসঙ্গে পাশ্চাত্যজগতে জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। তাঁকে যথোপযুক্ত অভ্যর্থনা জানাবার জন্য ছোটো বড়ো সব শহরেই সমিতি গঠিত হল। রমা রলাঁ লিখছেন যে স্বামী তাঁর জন্য দেশবাসীর এই আবেগ-উদ্বেলিত প্রতীক্ষার যে প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন তা ছিল রাম শিব ও কৃষ্ণের পীঠভূভুমিতে পুনরভ্যুত্থানের শঙ্খনিনাদ। অমর আত্মাকে জেগে উঠে বীরদর্পে’ এগিয়ে যাওয়ার আহ্ববান। সেনাপতির মতোই তিনি তাঁর ‘সামরিক কার্য’পদ্ধতি’ জানিয়ে তাঁর দেশবাসীকে সমবেত ভাবে আধ্যাত্মিক শক্তিতে অভ্যুত্থিত হতে আহান করেছিলেন, ‘হে আমার ভারত, উঠে দাঁড়াও। কোথায় তোমার সেই প্রাণশক্তি? তোমার সেই অমর আত্মার অনুসন্ধান কর।’
মাদ্রাজে তিনি জনসাধারণের সামনে পাঁচটি ভাষণ দেন, তার সবকয়টি ছিল দুর্বলতা ও কুসংস্কারকে দূরে ফেলে নবভারত গঠনের সতীব্র আহ্বান। তিনি বিশেষ ভাবে বলেন যে, ভারতের জাতীয় জীবন- সংগীতের মূল সুর হল- ধর্ম, যে ধর্ম ‘সমগ্র জগতের আধ্যাত্মিক ঐক্য’ শিক্ষা দেয়। যখন ধর্ম’ শক্তিমান হয়, তখনই অন্যান্য ব্যাপারগুলির সুরাহা হয়। তিনি তাঁর দেশবাসীর সংশোধনার্থে’ তাদের পাশ্চাত্য ভাবধারার অনুকরণ স্পৃহাকে, প্রাচীন কুসংস্কারকে অন্ধ-অনুকরণ করাকে এবং তাদের জাত্যাভিমান ইত্যাদিকে তীব্র সমালোচনা করেন।
বিবেকানন্দ ২০ ফেব্রুয়ারি কলিকাতায় আসেন। তাঁর জন্মস্থান তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানায়। এখানে তিনি তাঁর গুরুদেবের উদ্দেশে মর্মস্পর্শী শ্রদ্ধা জানান। ‘যদি আমি আমার চিন্তা, বাক্য ও কার্যদ্বারা সাফল্যের সঙ্গে কিছু অর্জন করে থাকি- যদি আমার মুখের কথায় জগতে কারো সাহায্য হয়ে থাকে- আমার তাতে কোনো দাবি নেই। আমি তাঁরই, এই জাতি যদি আবার দাঁড়াতে চায়, তবে আমার কথায় বিশ্বাস কর, তবে তাকে তাঁর নামেই পুনরায় একত্রিত হতে হবে।’