গুরু পূর্ণিমা
গুরু পূর্ণিমা পালিত হয় পবিত্র গুরু বেদ ব্যাসকে শ্রদ্ধার্ঘ জানানোর জন্য। মানব জাতির কল্যাণ সাধনের জন্য গুরু ব্যাস বেদকে একটি সুসংহত লিখিত রূপ প্রদান করেন । বেদ হল শাশ্বত সত্য, ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির শক্তি যা ঘটেছিল ঈশ্বরের ইচ্ছায়। এই সত্য সকল জ্ঞান ও ধর্মের মূল ভিত্তি।
দ্বাপর যুগের শেষে এই সত্য দ্রুত হারিয়ে যেতে থাকে এবং আপামর মানুষ বেদ বিস্মৃত হয়। নিয়ম এবং শৃঙ্খলার অবলুপ্তি ঘটে। একজন চিন্তাবিদের প্রয়োজন ছিল যিনি এদের শ্রেণীবদ্ধ করে, প্রকৃত পন্ডিত এবং ধর্ম ও সত্যের অন্বেষীদের কাছে বেদ কে প্রয়োজনীয় করে তুলবেন। ব্যাসদেব বেদকে শ্রেণীবদ্ধ করেন ঋগ, যজুর, সাম ও অথর্ব বেদে। এই মহান কাজের জন্য তাঁকে বেদ ব্যাস বলা হয়। তিনি পরাশর মুনির পুত্র ও বৈদিক ঋষি বশিষ্ঠের প্রপৌত্র, যিনি একজন মহান ভক্ত ও মানব জাতির হিতৈষী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মহান গুরু। যেহেতু ব্যাসের গায়ের রঙ কালো ছিল তাই তাঁকে কৃষ্ণ বলা হত আর উনি দ্বীপে জন্মেছিলেন বলে তাঁকে দ্বৈপায়নবলে ডাকা হত।
চারটি বেদ আছে — ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ব বেদ। ঋষি ব্যাস ব্রহ্ম সূত্র, মহাভারত মহাকাব্য, শ্রীমদ্ ভাগবতম্ ও ভগবদ্ গীতা রচনা করেন।
গুরু পূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমা ও বলা হয়। এটি প্রার্থনা ও অনুতাপের মাধ্যমে পালন করা উচিৎ, যার দ্বারাই একমাত্র হৃদয় পরিশুদ্ধ হয়, খাওয়া দাওয়া বা উপবাসের দ্বারা নয়— এগুলি শুধু শরীরকে প্রভাবিত করে। এটি পূর্ণিমা– যখন চাঁদ বিনা বাঁধায় পুর্ণমাত্রায় প্রকাশিত, চাঁদ তখন উজ্জ্বল, শান্ত ও পূর্ণ। মানুষের মনকেও চাঁদের সঙ্গে তুলনা করা হয় কারণ সেও চাঁদের মতো স্বেচ্ছাচারী– চাঁদের মতো কখনও আলোক বিকিরণ করে আবার কখনও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। এই দিন মনকেও উজ্জ্বল, দীপ্যমান ও শান্ত হতে হয়।
ব্যাস মহাভারত মহাকাব্য রচনা করেন মানুষের মন থেকে অজ্ঞতা, তুচ্ছতা, স্বার্থপরতা ও কাপুরুষতার অন্ধকার দূর করার জন্য। তাই তিনিই একমাত্র লোকগুরু, তিনিই দিব্য দীপ্তি। ব্যাস পথ দেখিয়েছেন– তাঁকে অনুসরণ করে আমাদের ওই পথ অতিক্রম করতে হবে। তিনি আমাদের মন ও হৃদয়কে পবিত্র করার মন্ত্র দিয়েছেন। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সেটা অভ্যাস করতে হবে, শান্তি ও অনুগ্রহ, অর্থ্যাৎ ঈশ্বরের কৃপা অর্জন করতে হবে।