ভজ গোবিন্দম সম্পর্কিত তথ্য
একটি জনপ্রিয় গল্প আমাদের বলে দেয় ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এই বিখ্যাত শ্লোকটি শঙ্করের মুখনিসৃত হয়েছিলো। এই গল্পে বলা হয়েছে একদা যখন তিনি তার শিষ্যদের নিয়ে বারানসী নগরে দৈনন্দিন ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন, তিনি শুনতে পেলেন একজন বৃদ্ধ পন্ডিত পানিনির সূত্র মুখস্থ করছেন। এই মানুষটির অজ্ঞতা ও মূর্খতা দেখে তার করুণা হল কারণ তিনি তার জীবন সায়াহ্নের মূল্যবান সময় অপচয় করছেন ঈশ্বরের কাছে দিব্য জ্ঞানের আলো ও পার্থিব বন্ধন মুক্তির প্রার্থনার পরিবর্তে শুধুমাত্র বৌদ্ধিক উৎকর্ষ সাধনের প্রচেষ্টায়। তিনি জানতেন যে শুধু মাত্র এই বৃদ্ধ মানুষটিই এই করুণ অবস্থার নন, বেশির ভাগ সাধনার মানুষেরই এরকম শোচনীয় অবস্থা। এভাবেই মানুষ তার জীবন অপচয় করে। ঈশ্বর, যিনি জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, তাকে ভুলে গিয়ে, পার্থিব আসক্তির পাঁকের চাটুকারিতা করতে করতে খুব তুচ্ছ ভাবে যখন তার প্রাণবায়ু নির্গত হয়। মানুষের এই দুর্দশার প্রতি স্নেহপরবশ হওয়ার ফলে তারা বিখ্যাত শ্লোক’ মোহ মুদগর’ রচনা করতে পেরেছেন। এই শ্লোকটি এখন’ ভজ গোবিন্দম’ নামে পরিচিত।
‘ওহে মূর্খ, মৃত্যু যখন তোমায় ছিনিয়ে নেবে, ব্যাকরণের জ্ঞান তখন তোমার কোনো কাজেই আসবেনা। এসব তুচ্ছ বিষয়ে সময় অপচয় না করে গোবিন্দের ভজনা করো, তিনি তোমায় জন্মমৃত্যুর করালগ্রাস থেকে রক্ষা করবেন।
তার পর্বতপ্রমান কাজের মধ্যে ‘ভজ গোবিন্দম’ একটি গৌণ রচনা। তার মুখ্য রচনা হল ‘ভাষ্যম’ যেখানে ভারতীয় ধর্মগ্রন্থের ওপর তার নিজস্ব মন্তব্য রয়েছে। ভজ গোবিন্দম ও আত্মবোধ, এই গ্রন্থগুলি প্রকারনা গ্রন্থের পর্যায়ে পরে। প্রকারনা হল আধ্যাত্মিক পাঠের প্রারম্ভিক ম্যানুয়াল। এগুলো হল প্রাথমিক প্রলেপ, আধ্যাত্মিকতার সূত্রপাত ঘটানোর জন্য দার্শনিক শর্তাবলীর ব্যাখ্যা মাত্র। আধ্যাত্মিকতার প্রাথমিক সত্য এই পুস্তিকাগুলি তুলে ধরেছে এবং এভাবেই তা মানুষকে ভাবায়, ‘আহা, এটাই জীবন! এই বন্দিত্বের নরক থেকে আমি অবশ্যই মুক্তি চাইবো। ঈশ্বর আমার পথ প্রদর্শক হোন ও আমায় সাহায্য করুণ।’ মানুষকে এভাবে জীবনের কর্দমাক্ত চোরাগোলি থেকে টেনে বের করে আনা হয় এবং তাকে আধ্যাত্মিকতার ঈশ্বরিক পথে, যে পথের ঠিকানা স্বয়ং ঈশ্বর, সেই পথে নিয়ে যায়।
বৃন্দাবনে ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার ওপর গ্রীষ্মকালীন অধিবেশন (সামার কোর্স) চলাকালীন ১৯৭৩ সালের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভগবান শ্রী সত্য সাইবাবা তাঁর সন্ধ্যাকালীন দিব্য ভাষণের বিষয় হিসেবে ‘ভজ গোবিন্দম’ শ্লোকটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। তিনি ভজ গোবিন্দম এর ১৬ টি স্তবক তেলেগু তর্জমায় তাঁর অনন্য সুন্দর ভঙ্গিমায় সুমধুর ভাবে গাইলেন। তাঁর দিব্য ভাষণে তিনি ‘ভজ গোবিন্দম’ এত সূক্ষ্ম ও নিখুঁত সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করলেন যে মনে হচ্ছিল শঙ্কর স্বয়ং শ্লোকগুলি সবিস্তারে আলোচনা ও ব্যাখ্যা করছেন এবং তাদের অর্থের গভীরতা প্রকাশ করছেন। সুতরাং এই বিষয়ে অধিকতর জ্ঞান অর্জন করতে হলে বাবার দৈবভাষণ সমৃদ্ধ ‘সামার সাওয়ারস্ ইন বৃন্দাবন ১৯৭৩’ বইটি ভালো করে পড়ার পরামর্শ দেওয়া যেতেই পারে। বাবা গানটির সারমর্ম ব্যাখ্যা করে উপদেশ দিয়েছেন, ‘ওহে মূঢ়মতি! তুমি মুক্তিমতি হও এবং প্রভু গোবিন্দের ভজনা করো।’
বাবা তাঁর দিব্য ভাষণের জন্য ১৬ টি স্তবক মনোনীত করেছিলেন এবং সেই স্তবকগুলিই বালবিকাশের পাঠ্যক্রমে্র অন্তর্ভুক্ত। (এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানার জন্য গুরুদের ‘সামার সাওয়ার ইন বৃন্দাবন ১৯৭৩’ বইটি পাঠ করা প্রয়োজন।)