রাবণের পতন
রাক্ষস ও বানরগণের মহাযুদ্ধ আরম্ভ হলো। সুগ্রীব, হনুমান, অঙ্গদ, জাম্ববান প্রভৃতি বানর সেনাপতিদের হতে রাবণের শক্তিশালী সেনাপতিগণ মারা পড়ল। রাবণ বুঝলেন, যুদ্ধের গতি তার বিপরীত দিকে।
রাবণের প্রধান সেনাপতি প্রহস্তের মৃত্যুর পর রাবণ স্বয়ং রণক্ষেত্রে এলেন। রাবণকে প্রথম দেখলেন রামচন্দ্র, তার প্রতি রামের শ্রদ্ধা ও প্রশংসা জাগলো। অসৎকর্মটি (সীতাহরণ) বাদ দিলে রাবণ এক বিরাট, মহান পুরুষ। শুরু হলো রাম রাবণের সম্মুখ-সমর। রামের অস্ত্রে রাবণের মুকুট, রথ ও অস্ত্রাদি ধ্বংস হল। রামের সামনে দাঁড়িয়ে রাবণ অসহায় ও হতভম্ব – রাম কিন্তু সদয়ভাবে বললেন, রাবণ, আমি নিরস্ত্র যোদ্ধার সঙ্গে যুদ্ধ করি না। আজ যাও, কাল অস্ত্র সজ্জিত হয়ে এস।” রাবণ নতমস্তকে প্রস্থান করলেন। মনে জাগলো ভয় ও লজ্জা—কোনদিন তিনি পরাস্ত হননি। উপলব্ধি করলেন যে তিনি অপরাধী—বিবেকবোধ জাগলো কিন্তু পথরোধ করল তার অহঙ্কার। তাই, তখনও রামের শরণ না নিয়ে তিনি তাঁর নিদ্রিত ভ্রাতা কুম্ভকর্ণকে অসময়ে জাগিয়ে রণক্ষেত্রে পাঠাবার আদেশ দিলেন।
জাগরিত হয়ে কুম্ভকর্ণ রাবণসমীপে এলেন। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাছে লঙ্কার দুর্দশার কথা শুনে বললেন, ‘অপরের পত্নী অপহরণ করে আপনি অন্যায় করেছেন। যুদ্ধে রামকে পরাস্ত করে তার পত্নীকে আনতে পারতেন। সদুপদেশ ত্যাগ করে তোষামোদ প্রিয় হয়েছেন। যাইহোক আপনি আমার জ্যেষ্ঠভ্রাতা, বিপদে পড়েছেন—আমার কর্তব্য আপনাকে সাহায্য করা’।
এ কথা বলে সজ্জিত কুম্ভকর্ণ রণক্ষেত্রে গেলেন। রাম ও বানরবাহিনীকে আক্রমণ করে অনেক ধ্বংস করলেন। ভীষণযুদ্ধে বীরবিক্রমে লড়াই করে রাম কুম্ভকর্ণকে বধ করলেন। পরবর্তী সেনাপতি ইন্দ্রজিৎ লক্ষ্মণের হাতে নিহত হলেন। রাবণ ভীত, সন্ত্রস্ত কিন্তু এখন ফেরার পথ নেই। মহাযোদ্ধা তিনি, তাই ঠিক করলেন যে শেষপর্যন্ত লড়াই করবেন।।
অস্ত্রপূর্ণ দৈব রথে আরোহণ করে তিনি রণে এলেন এবং বানরব্যুহ ভেদ করে রামচন্দ্রকে আক্রমণ করলেন—সর্বশক্তি ও অস্ত্রবিদ্যা নিয়ে রামের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। দেবরাজ ইন্দ্র তার রথ ও সারথি মাতলিকে রামের সাহায্যে পাঠালেন। দেবতার সাহায্য নিয়ে রামচন্দ্র যুদ্ধ শুরু করলেন তিনি একটি একটি করে রাবণের মস্তক ছেদ করতে লাগলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য মাথাগুলি আবার স্বস্থানে ফিরে আসতে লাগলো। মাতলি রামকে অগস্ত্য-প্রদত্ত দৈবাস্ত্র প্রয়োগ করতে বললেন। রাম সেই উপদেশমত মহাস্ত্র ত্যাগ করলেন। সেই ভীষণ অস্ত্র রাবণের বুকে আঘাত হানলো। রাবণ ধরাশায়ী হলেন। বানরগণের ও অন্তরীক্ষে দেবগণের আনন্দ আর ধরে না।
দুঃখে হাহাকার করে উঠলেন বিভীষণ। রাম সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘বিভীষণ, যত দোষ থাকুক, রাবণ তোমার সহোদর। শ্রদ্ধার সঙ্গে তার পারলৌকিক ক্রিয়াদি সম্পন্ন কর’ |
রাম লক্ষ্মণকে বললেন, দেখলে ভাই, কী বিরাট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ। কিন্তু কাম-প্রবৃত্তি ও অহমিকার জন্য তার পতন ঘটলো।
প্রশ্নঃ
- রাবণ কেন যুদ্ধের ফলাফল সম্বন্ধে চিন্তিত হয়ে পড়লেন?
- যুদ্ধে যাবার কথা শুনে কুম্ভকর্ণের কি প্রতিক্রিয়া হলো?
- রাবণ সম্পর্কে রামের ধারণা পোষণ করতেন?