সদুপদেশ অগ্রাহ্য
রাম লক্ষ্মণ সুগ্রীব লঙ্কা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। বিরাট বানর বাহিনী সমুদ্রতীরে উপস্থিত হল। তারপর তারা চিন্তা করতে লাগলেন কেমন করে অসীম সমুদ্র পার হবেন। ইতিমধ্যে রাবণ বানরসৈন্যের আগমন সংবাদ পেয়ে বিশেষ চিন্তিত হলেন। সেজন্য তিনি মন্ত্রিপরিষদ ডাকলেন এবং বললেন, ‘আপনারা দেখলেন একটি বানর লঙ্কাপুরে সে কী ধ্বংস করে গেল। সে রামের অনুচর। রাম এবার লঙ্কা আক্রমণ করবে। আমি আপনাদের সু-পরামর্শ চাই।’
সত্যিই রাবণের আত্মবিশ্বাসে আঘাত লেগেছিল। সেনাপতিরা একবাক্যে বললেন, রাক্ষসবাহিনী খুবই সবল ; তারা বানরসেনা হটাতে পারবে। রাবণ সহজেই রাম লক্ষ্মণকে বধ করতে পারবেন। কিন্তু প্রতিবাদ এল অনুজ বিভীষণের কাছ থেকে। তিনি বাল্যাবধি ঈশ্বরভক্তি ও ধর্মপ্রাণতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি বিনীতভাবে বললেন, ‘দাদা, নির্বোধ এই সব সেনাপতির কথায় আস্থা স্থাপন করা উচিত নয়। রামের পত্নীকে অপহরণ করে বড় অন্যায় করেছেন। এখনও সময় আছে। সীতাকে সসম্মানে ফিরিয়ে দিন, রামচন্দ্র ক্ষমা করবেন। কিন্তু অহংকারের পথে চললে লঙ্কা ও রাক্ষস-বংশের ধ্বংস অনিবার্য।’
এই সদুপদেশ রাবণের ভাল লাগলো না। ভাইকে কাপুরুষতার জন্যে দোষ দিয়ে সকলকে যুদ্ধের নিমিত্ত প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিলেন। বিভীষণ পুনরায় অনুনয় বিনয় করলেন কিন্তু রাবণের অহংকার কর্ণপাত করলো না। প্রধান মহিষী মন্দোদরী নতজানু হয়ে বললন, ‘প্রভু সীতাকে ফিরিয়ে দিন। সীতা আসার পর থেকে লঙ্কায় নানা অমঙ্গল দেখা যাচ্ছে। আপনার অসংখ্য সুন্দরী স্ত্রী বর্তমান। একজন সামান্য মানবীর জন্য কেন এই মোহ ? শুনেছি রামের বান অতি তীক্ষ্ণ – সব ধ্বংস করবে।
এই যুক্তিও রাবণের ভাল লাগলো না-সহাস্যে বললেন, ‘তোমার এই ভয় স্ত্রীলোক-সুলভ। স্ত্রীলোকের উপদেশ গ্রহণ করলে লোকে উপহাস করবে। তোমার ত্রিলোক বিজয়ী স্বামী শেষে নর-বানরের ভয়ে ভীত হবেন? কাজেই যুদ্ধ অনিবার্য।
প্রশ্নঃ
- রাবণের মন্ত্রী এবং পারিষদবর্গ কিভাবে তাঁকে প্ররোচিত করলো?
- রাবণ কেন বিভীষণ এবং মন্দোদরীর সৎ পরামর্শ অগ্রাহ্য করলেন?