সীতার অন্বেষণ
বালির মৃত্যুতে সুগ্রীব সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হলেন। রাম লক্ষ্মণ ঋষ্যমুক পর্বতে সময় কাটাতে লাগলেন। সুগ্রীব ব্যাপক তল্লাসীর জন্য যথেষ্ট সময়ক্ষেপ করছেন দেখে রাম লক্ষ্মণ অধীর হয়ে উঠলেন। হনুমান সুগ্রীবকে তার শপথের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। সুগ্রীব যথোচিত ব্যবস্থা করলেন। পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ চারদিকে উপযুক্ত সেনানীর অধীনে বানরবাহিনী প্রেরিত হ’ল। দক্ষিণের বাহিনী যুবরাজ অঙ্গদের অধীনে চালিত হল, এ দলে হনুমান, জাম্ববান ও জ্ঞানী নলও ছিলেন।
যাত্রার প্রাক্কালে রাম হনুমানকে ডাকলেন। তিনি বুঝেছিলেন হনুমানই সীতার সংবাদ আনার উপযুক্ত—সেজন্য তিনি হনুমানকে স্বীয় নামাঙ্কিত আংটি দিলেন সীতাকে দেবার জন্য। হনুমান হয়ে উঠলেন রামের প্রিয়তম সেবক।
পূর্ব পশ্চিম ও উত্তরের দলগুলি একমাস পর ফিরে এল। কিন্তু দক্ষিণ বাহিনীর কোন খবর নেই। তারা নদী গিরি বন উপবন তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। শেষে তারা দক্ষিণে সমুদ্রতীরে উপস্থিত হল। অনন্ত জলরাশি দেখে তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। কি করবে স্থির করতে পারলো না।
সম্পাতি নামে এক পক্ষিরাজ পাহাড়ের চূড়া থেকে বানর-বাহিনীকে লক্ষ্য করছিলেন, তাদের ভক্ষণ করার সুযোগ খুঁজছিলেন। কিন্তু তাদের কথার মধ্যে জটায়ুর নাম উল্লেখ শুনে তিনি তাদের ডাকলেন। বানরগণ সম্পাতির কাছে রামচন্দ্রের কাহিনী ও তাদের উদ্দেশ্য জানালো। যখন শুনলেন ভাই জটায়ু রাবণ কর্তৃক নিহত তখন সম্পাতি সমুদ্রপারে লঙ্কার দিকে দৃষ্টি দিলেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস যে তারা সীতাদেবীকে লঙ্কায় খুঁজে পাবে। রামচন্দ্রকে সাহায্য করায় তার আশীর্বাদে সম্পাতি পক্ষ দুটি ফিরে পেলেন এবং মনের আনন্দে উড়ে গেলেন।
বানরগণ এবার নিশ্চিন্ত হল যে সীতাদেবী লঙ্কায় আছেন। কিন্তু সেখানে কি করে যাওয়া যাবে? দলপতি অঙ্গদ বানরদলের প্রত্যেককে, তাদের শক্তিসামর্থ্য জিজ্ঞাসা করলেন। প্রত্যেকে তাদের সামর্থ্য বললো। কিন্তু সমুদ্র অনেক অনেক গুণ বিস্তৃত। তখন জাম্ববান হনুমানকে সম্ভাষণ করে তার অন্তর্নিহিত শক্তি জাগিয়ে তুললেন। অবশেষে সমুদ্র পার হয়ে সীতানুসন্ধান করতে হনুমান রাজী হলেন। হনুমানের দেহ ক্ৰমশঃ বড় হতে লাগলো। সমগ্র পর্বত ঢাকা পড়ে গেল। পিতা পবনদেব ও প্রভু রামচন্দ্রকে স্মরণ করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে তিনি আকাশে ঝাঁপ দিলেন।
প্রশ্নঃ
- সীতাকে খুঁজতে সুগ্রীবের এত সময় লাগছিল কেন?
- বানরেরা কি করে জানতে পারলো যে সীতা লঙ্কায় আছেন?