ধংসের পথ
লঙ্কার রাক্ষসরাজ রাবণ দুর্দান্ত প্রতাপে রাজত্ব করছিলেন। তিনি ইন্দ্রসহ দেবগণকে পরাজিত করেছেন এবং অষ্টদিকপাল তাঁর প্রাসাদে প্রহরার কাজে রত। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে রাক্ষস অকম্পন রাজসভায় এলে রাবণ গর্জন করে উঠলেন, ভয় পাচ্ছ কেন? কী হয়েছে? ভীত অকম্পন জানালো যে রাম নামক এক রাজকুমার দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করে খর, দূষণ, ত্রিশূল প্রভৃতি সেনাপতি ও সমগ্র রাক্ষসবাহিনী ধ্বংস করেছে, সূর্পনখার মুখশ্রী নষ্ট করেছে।
রাবণ ক্রোধে কম্পমান হলেন। তিনি সিংহাসন হতে উঠে পড়লেন ক্ষুদ্র নর রামকে বধ করার জন্য। অকম্পন তাঁকে শাস্ত করে বললো, ‘রাজন, রাম-দমন অত সহজ নয়। ক্ষমা করবেন, আপনি শৌর্যে তার সমান নন। তবে একটা কথা, রামের স্ত্রী সীতা পরমাসুন্দরী। ছলেবলে যদি তাকে আপনি আনতে পারেন, তবে মনোদুঃখে রাম নিশ্চয়ই প্রাণত্যাগ করবে।’ রাবণ চিন্তিত হলেন। পরদিন সকালে রাবণ মারীচের আশ্রমে গেলেন। মারীচ ধার্মিক ও জ্ঞানী। তিনি রাবণকে সীতাহরণ হতে নিবৃত্ত করলেন, বললেন, রামের সঙ্গে কলহ করলে সবংশে আপনার নিধন হবে। তার বাণের ক্ষতচিহ্ন এখনও আমার শরীরে। এ কথায় রাবণ শান্তভাবে লঙ্কায় ফিরে এলেন। পরদিন সকালে ভগ্নী সূর্পনখা নাক কান কাটা অবস্থায় রাবণের কাছে এল! সে রাম লক্ষ্মণের হাতে কেমন লাঞ্ছিত হয়েছে ও সীতার বিদ্রুপ—সবকিছু রাবণের কাছে ব্যক্ত করলো।
রাবণ তাকে সান্ত্বনা দিলেন। কিন্তু সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘দাদা, আমি খেতে বা ঘুমুতে পারছি না যতক্ষণ না সীতা লাঞ্ছিত হয়। তার অনুপম রূপ দেখে মনে হলো তাকে তোমার পাশেই মানায়। রাবণ ভগ্নীকে আশ্বাস দিলেন।
এই সংকল্প নিয়ে রাবণ পুনরায় মারীচের আশ্রমে গেলেন। তিনি মারীচকে তার মতলব খুলে বললেন। মারীচ সোনার হরিণের রূপ ধরে রামকে দূরে নিয়ে যাবেন এবং রামের কণ্ঠস্বরে লক্ষ্মণকে আহবান করবেন। সীতা তখন একলা থাকবেন। সেই অবকাশে রাবণ তাকে হরণ করে নিয়ে যাবেন।
একথা শুনে মারীচ হতবাক। তিনি করজোড়ে আবার রাবণকে এ পথ হতে সরে আসার জন্য অনুরোধ করলেন—নতুবা সমূহ বিপদ। কিন্তু রাবণের শুভবুদ্ধি জাগলো না। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে মারীচকে বললেন, তোমার কাছে উপদেশ নিতে আমি আসি নি। এ আমার আদেশ।
মারীচ বিপদ বুঝলেন। রাবণের হাতে মৃত্যু অপেক্ষা রামের বাণে মৃত্যু বরণীয়। রাবণ ও মারীচ দণ্ডকারণ্যের দিকে চললেন।
প্রশ্নঃ
- রাবণ কিভাবে রামের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হতে প্ররোচিত হলেন?
- মারীচ তাঁকে কি উপদেশ দিলেন?