পত্রং পুষ্পং – বিশদ পাঠ
পত্ৰং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।
তদহং ভক্ত্যপহৃতমশ্মামী প্রযতাত্মনঃ।।
(chap ৯, verse ২৬)
যে আমাকে ভক্তির সঙ্গে পত্র ,পুষ্প ,ফল ও জল অর্পণ করে ,আমি সেই শুদ্ধচিত্ত ভক্তের ভক্তিপূর্ণ উপহার প্রীতির সঙ্গে গ্রহণ করি।
প্রেমের সঙ্গে দেওয়া সামান্য বস্তুও ভগবানকে আনন্দ দেয়। যাঁর অনন্ত দানে সমগ্র সৃষ্টি পূর্ন তাঁকে কী বা আমরা দিতে পারি? আমরা যে পত্র, পুষ্প, ফল ও জল তাঁকে নিবেদন করি, তাও তো তাঁরই সৃষ্টি। বাবা বলেন,” আমাদের হাত দিয়ে নয় হৃদয় থেকে তাঁকে নৈবেদ্য দিতে হবে। আমাদের ধার্মিক ও মহান চিন্তাই হবে ফুল: নিষ্কাম কর্ম হবে ফল। অন্যের দুঃখে আমাদের হৃদয় বিগলিত হয়ে যে অশ্রুধারা নেমে আসবে, তাই আমরা তাঁর চরণে অর্পণ করব।কতটা পরিমাণে পায়েস তাঁকে নিবেদন করা হল, সেটা তিনি দেখেন না। কত মিষ্টি কথা তুমি বললে, চিন্তায় কতটা মধুরতা মিশ্রিত করলে, সেটাই ভগবান দেখেন। বাজারে যা কিনতে পাওয়া যায়, সেই ধূপের সুগন্ধ ছড়ানোর চেষ্টা করে কি লাভ? দিব্য চিন্তার সুগন্ধি ধূম, যাতে মিশে আছে সকলের প্রতি প্রেম, সেটাই তোমাদের চারিদিকে উত্থিত হোক।”
একবার সাধু একনাথ এবং তাঁর সঙ্গীরা একটি মানসিক করলেন। সেইমত তাঁরা রামেশ্বরে শিবলিঙ্গকে স্নান করানোর জন্য বারাণসী থেকে পবিত্র গঙ্গাজল নিয়ে যাচ্ছিলেন। রামেশ্বরম ভারতের দক্ষিণের একদম শেষ প্রান্তে, তিনটি সমুদ্রের সঙ্গমে অবস্থিত। সেই জল নিয়ে তাঁরা সহস্রাধিক মাইল দূরত্ব অতিক্রম করছিলেন। এই দীর্ঘ তীর্থপরিক্রমা প্রায় সমাপ্ত হতে চলেছে, একনাথ মন্দিরের কাছাকাছি এসে গিয়েছেন। ঠিক এই সময়ে তিনি দেখলেন যে একটি গাধা তৃষ্ণায় মরণাপন্ন হয়ে ছটফট করছে। কোনো দ্বিধা না করে একনাথ ছুটে গিয়ে সেই তৃষ্ণায় কন্ঠগতপ্রাণ গাধাটির মুখে সেই পবিত্র জল ঢেলে দিলেন। মানস পূর্ন হওয়ার মুখে, এত দূর পথ এত কষ্ট করে পার হয়ে এসে, একনাথের সংকল্পের সম্পূর্ণ বিপরীত এই আচরণ দেখে তাঁর সঙ্গীরা স্তম্ভিত হয়ে ভাষা হারিয়ে ফেললেন।
একনাথ কিন্তু অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বলে উঠলেন, “আমার সংকল্প সিদ্ধ হয়েছে! শিব যা চেয়েছিলেন, তা তিনি গ্রহণ করেছেন। শিব এসে নৈবেদ্য গ্রহণ করেছেন।” যে কোনো ভাবে যদি আর্তের সেবা করা হয়, তা স্বয়ং ঈশ্বরের কাছে পৌঁছয়।