ইহুদী ধর্ম, খ্রীস্টান ধর্ম এবং, ইস্লাম ধর্ম
ইহুদী ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম—সেমিটিক ধর্মবর্গের অন্তর্ভুক্ত। ‘সেমিটিক’ অর্থে নোয়ার পুত্র ‘শেম’ এর বংশধর বোঝায়। এক অর্থে ইহুদী ধর্মকে জননী স্বরূপা, খ্রীস্টান ধর্মকে কন্যারূপা ও ইস্লাম ধর্মকে কনিষ্ঠ জাত হিসাবে ধরা হয়।
মোজেস ছিলেন সেই মহাপুরুষ যিনি ইহুদীদের ধর্মীয় বিধিগুলি—যা ঈশ্বর ‘জিহোবা’ তাঁর কাছে পুনরায় প্রকাশ করে বলেছিলেন—এবং হিব্রুদের প্রাচীন ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করে দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কালক্রমে যখন হিব্রুরা দিব্য বিধির অন্তর্নিহিত ভাবকে ভুলে গিয়ে শুধু বহিরঙ্গ ও আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে মত্ত থাকত, সেই সময়ে যীশু আবির্ভূত হলেন মানুষের চেতনায় প্রত্যায়িত করার জন্য যে, ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল ‘অন্তরের পবিত্রতা এবং ন্যায় বিচারের বিধি ও উদ্দেশ্যের কাঠিন্যকে প্রেমপ্রীতির বিধির মিশ্রণে কোমল করে তোলা’। তিনি বলেছেন, ‘আমি এসেছি মোজেস প্রদত্ত বিধিগুলিকে সম্পূর্ণ করতে—সেগুলিকে ধ্বংস করতে নয়।’ ইহুদী ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করে তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি ক্রুশে জীবন বিসর্জন দিতেও কুন্ঠিত হন নি। এই ভাবে খ্রীষ্টান ধর্মের সূত্রপাত হয়। যদিও প্রথমদিকে এই ধর্ম ইহুদী ধর্মের একটি সম্প্রদায় হিসাবে পরিগণিত হত তবুও কালক্রমে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর দ্বারা এই ধর্ম একটি বিশিষ্ট ও স্বাধীন নূতন ধর্ম হিসাবে গড়ে উঠেছে। কালক্রমে এটি জননীকে খর্ব করে একটি প্রধান বিশ্বধর্মে পরিণত হয়।
সপ্তম শতাব্দীতে আরবে মানুষজন কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন রকম ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় রীতিনীতিতে বিশ্বাস করত। তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। ঠিক এই সময় পয়গম্বর মুহম্মদ আবির্ভূত হয়ে মানুষকে সর্বশক্তিমান প্রভুর কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করার শিক্ষা দেন। যদিও তিনি বলেছিলেন যে তিনি শুধুমাত্র খ্রীষ্টধর্মকেই সম্পূর্ণ করতে এসেছেন, কালক্রমে তাঁর শিক্ষাগুলো একটি নতুন ধর্মের জন্ম দেয়– যেটি হলো ইস্লাম।
তিনটি ধর্মের মূলনীতি কিন্তু এক। প্রতিটি ধর্মই ‘ঈশ্বরের পিতৃত্ব এবং মানবের ভ্রাতৃত্বের’ উপর গুরুত্ব দিয়েছে।